ঘুষ না দেয়ায় প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৮ তলা থেকে
ফেলে দেয়ার হুমকি
৪ লাখ টাকা ঘুষ না দেয়ায় শিক্ষা ও প্রকৌশল
অধিদপ্তরের এক কর্মচারীকে ৮ তলা থেকে
ফেলে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, টাকা
না দেয়ায় ওই কর্মচারীর কাছ
থেকে পদত্যাগপত্র নেয়া হয়েছে জোর করে। নিয়োগ কমিটির সদস্য
সচিব ও অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) বিজয় কুমার ঘোষ নিজেই এ কাজ
করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন নির্যাতিত কর্মচারী
ফুয়াদ হোসেন কাদেরী। বিষয়টি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী
নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর
কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। ১২ই জুন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কক্ষে নির্যাতন করে তার কাছ থেকে
পদত্যাগপত্র নেন বিজয় কুমার ঘোষ।
এ সময় প্রধান প্রকৌশলী আবদুল্লাহিল আজাদ ও নিয়োগ কমিটির প্রধান এবং অধিদপ্তরের পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) আবদুল লতিফও
উপস্থিত ছিলেন। পদত্যাগপত্রে
ফুয়াদকে লিখতে বলা হয় ‘আমি শারীরিকভাবে অক্ষম তাই চাকরি থেকে অব্যাহতি চাচ্ছি’।
অথচ সচিবালয় ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্যগত সনদ নিয়ে ২২শে জুন গার্ড
হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন ফুয়াদ। এর আগে অবশ্য তিনি অধিদপ্তরে মাস্টাররোলে দীর্ঘ ৮ বছর কাজ করেছেন। গার্ড পদে
১০ জন, গাড়িচালক পদে ২ জন, এলএলএসএস
পদে ৯ জন ও চৌকিদার পদে ৯ জনের নিয়োগের বিষয়ে ২০১১ সালের ২৪শে মার্চ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। ওই নিয়োগ কমিটির
প্রধান ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুল
লতিফ (অর্থ ও হিসাব), সদস্য সচিব ছিলেন প্রকৌশল শাখার
উপ-পরিচালক (প্রশাসন) বিজয় কুমার ঘোষ। চাকরিতে আবেদন করার
পর থেকে চাকরি দেয়ার নামে বিজয়
কুমার ঘোষ টাকা দাবি করে আসছিলেন ফুয়াদের কাছে। ১৭ই মে ফুয়াদ শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর গাড়ির
রেজিস্ট্রেশনের টাকা জমা দিতে
মিরপুরের বিআরটিএ-তে যাচ্ছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রোকেয়া সরণি পর্যন্ত যেতেই বিজয় কুমার ঘোষ ফোন করেন তাকে।
ফোনে তাকে দ্রুত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে
যেতে বলেন। ফুয়াদ মোটরসাইকেলযোগে প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যালয় থেকে স্টিকারযুক্ত একটি গাড়ি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে
যান। ফুয়াদ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল
ইসলাম নাহিদের কক্ষের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। বিজয় এ সময় শিক্ষামন্ত্রীর রুম থেকে বেরিয়ে ইশারা করে তাকে ১৭ তলায় নামতে
বলেন। ১৭ তলায় গিয়ে ফুয়াদকে তিনি
বলেন, তোর চাকরি হতে হলে কমপক্ষে ৪ লাখ টাকা লাগবে।
আজই দিতে হবে ২ লাখ
টাকা, পরে আরও দিতে হবে ২ লাখ টাকা। টাকা দিতে
অস্বীকার করলে বিজয় রেগে গিয়ে
তাকে বলেন, তোর চাকরি কিভাবে হয় দেখে নেবো। এরপর চলে যান
ফুয়াদ। ২০শে মে ফুয়াদ কাজ
করছিলেন প্রকৌশল অধিদপ্তরের নিচ তলায়। সন্ধ্যায় বিজয় অফিস
থেকে নিচে নামেন। ওইদিনই নিয়োগ পরীক্ষার ফাইনাল বৈঠক ছিল। তার সঙ্গে
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব
মুজিবুর রহমানও ছিলেন। মুজিবুর রহমান চলে গেলে
বিজয় তার গাড়ি রেডি করে দিতে বলেন ফুয়াদকে। এ সময় তিনি বলেন, টাকা
তো দিলি না তোকে সাভারে বদলি করে দিয়েছি।
দ্রুত টাকার ব্যবস্থা না করলে তোর চাকরিটাও
থাকবে না। ২২শে মে ফুয়াদ চাকরিতে যোগ দেন। চাকরি করাকালে বিজয় প্রায় দিনই তার কাছে টাকার তাগাদা দিতেন। ১২ই
জুন প্রধান প্রকৌশলীর পিএ যান্ত্রিক
শাখায় ফোন করে ফুয়াদকে প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে যেতে বলেন। কিছুক্ষণ পর বিজয়ও ফোন করে ফুয়াদকে প্রধান
প্রকৌশল শাখায় যেতে বলেন। সাড়ে ১১টার
দিকে ফুয়াদ প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে যান। গিয়ে দেখেন সেখানে প্রধান প্রকৌশলী আবদুল্লাহিল আজাদ, পরিচালক
আবদুল লতিফ বসা। বিজয় এ সময় ফুয়াদকে
প্রশ্ন করেন, তুমি কয়টা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছো? সত্য
কথা বলো। তা না হলে
এখনই র্যাব ডেকে রিমান্ডে দেবো। দু’টি পরীক্ষায় অংশ
নেয়ার কথা স্বীকার না
করলে আটতলা থেকে ফেলো দেবো। এ সময় ফুয়াদের শার্টের পেছনে ধরে একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন বিজয় কুমার ঘোষ। ১২ই
জুন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম
নাহিদ ও শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী লেখা বরাবর লেখা এক প্রধান
প্রকৌশলী আবদুল্লাহিল আজাদ ও পরিচালক আবদুল-আবেদনে
ফুয়াদ লিখেছেন লতিফের
উপস্থিতিতে উপ-পরিচালক বিজয় কুমার ঘোষ আমাকে শারীরিকভাবে অক্ষম বলে সাদা কাগজে আবেদন করে স্বাক্ষর করতে বলেন। আমি
প্রস্তাব অস্বীকার করলে আইনে সোপর্দ
করবে বলে বলা হয়। এমনকি আমাকে হুমকি দিয়ে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে চাপ দেয়া হয়। আমি আমার অপরাধ জানতে চাইলে
ডিডি তড়িঘড়ি করে কোন উত্তর না
দিয়ে আমাকে আবেদন লেখা শুরু করতে বলেন। ফুয়াদ শিক্ষামন্ত্রীর বরাবর লেখা আবেদনে আরও লিখেছেন, আমি
হতাশ হয়ে তাদের মুখের দিতে তাকিয়ে থেকে আবেদন আমি শারীরিকভাবে অক্ষম বিধায় নিয়োগ-লিখতে
শুরু করি। আবেদনে লিখতে বলা হয় থেকে
অব্যাহতি চাই। অথচ আমি সচিবালয় ক্লিনিক থেকে সনদ নিয়ে ২২শে মে কাজে যোগদান করি। আবেদনে স্বাক্ষরের পর আমাকে ডিডি
প্রশাসনের অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে
১৫ দিনের জন্য বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য বলেন এবং এই সময়ের মধ্যে শিক্ষা ভবনে না আসার জন্য হুমকি দেন। ফুয়াদ ওই ঘটনার
পর শিক্ষা সচিবের কাছে বিস্তারিত
ঘটনা বলেন। শিক্ষা সচিব সঙ্গে সঙ্গে প্রধান প্রকৌশলীকে ফোন করে জানতে চান ফুয়াদের কাছ থেকে জোর করে স্বাক্ষর
নেয়া হয়েছে কিনা। উত্তরে প্রধান
প্রকৌশলী বিষয়টি স্বীকার করেন। শিক্ষা সচিব এ সময় প্রধান প্রকৌশলীকে বলেন, ফুয়াদের
বিরুদ্ধে যাতে কোন ব্যবস্থা নেয়া না হয়। বিষয়টি মন্ত্রণালয় দেখবে। ১৩ই জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক
কর্মকর্তা ও কর্মচারী পরিষদের
সভাপতি হায়দার আলী মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেনসহ
কয়েকজনকে নিয়ে
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে গিয়ে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলেন ও লিখিত অভিযোগ করেন। মন্ত্রী ঘটনা শুনে
দুঃখপ্রকাশ করেন। মন্ত্রী নিজেই
অভিযোগটি প্রধান প্রকৌশলী বরাবর মার্ক করেন। বিষয়টি তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল হোসেন
চৌধুরীকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন
করা হয়েছে। কমিটি ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নিয়েছে। এ বিষয়ে হায়দার আলী মোল্লা মানবজমিনকে বলেন, ছেলেটি
মন্ত্রণালয়ের নিচে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলো।
আমরা তাকে সচিব মহোদয়ের কাছে নিয়ে যাই। সচিব প্রধান প্রকৌশলীকে ফোন করে বিষয়টি জানতে চান। তিনি বলেন, কোন
সভ্য সমাজে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে
না।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য: অভিযোগের বিষয়ে বিজয় কুমার ঘোষ বলেন, আমি তার কাছ থেকে কখনও টাকা চাইনি। ফোনে তাকে মন্ত্রণালয়ে যেতে বলেছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় অনেককে ফোন করি, তাকেও হয়তো ফোন করেছিলাম। তার কাছ থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্র নিলেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জোর করে পদত্যাগপত্র নিইনি। সে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছে। পদত্যাগপত্রে তাকে শারীরিকভাবে অক্ষম বলে আপনি জোর করে স্বাক্ষর নিয়েছেন এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে নিজেই শারীরিকভাবে অক্ষম বলে স্বীকার করেছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে সে কিভাবে অক্ষম হয়ে গেল জানতে চাইলে বিজয় কুমার ঘোষ বলেন, এটা আমি কি করে বলবো? প্রধান প্রকৌশলী আবদুল্লাহিল আজাদ বলেন, ওই পদত্যাগপত্র এখনও গ্রহণ করা হয়নি। আপনার কক্ষে একজন কর্মচারীর কাছ থেকে জোর করে কিভাবে পদত্যাগ নেয়া হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে ফুয়াদ হোসেন কাদেরী বলেন, আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য: অভিযোগের বিষয়ে বিজয় কুমার ঘোষ বলেন, আমি তার কাছ থেকে কখনও টাকা চাইনি। ফোনে তাকে মন্ত্রণালয়ে যেতে বলেছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় অনেককে ফোন করি, তাকেও হয়তো ফোন করেছিলাম। তার কাছ থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্র নিলেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জোর করে পদত্যাগপত্র নিইনি। সে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছে। পদত্যাগপত্রে তাকে শারীরিকভাবে অক্ষম বলে আপনি জোর করে স্বাক্ষর নিয়েছেন এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে নিজেই শারীরিকভাবে অক্ষম বলে স্বীকার করেছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে সে কিভাবে অক্ষম হয়ে গেল জানতে চাইলে বিজয় কুমার ঘোষ বলেন, এটা আমি কি করে বলবো? প্রধান প্রকৌশলী আবদুল্লাহিল আজাদ বলেন, ওই পদত্যাগপত্র এখনও গ্রহণ করা হয়নি। আপনার কক্ষে একজন কর্মচারীর কাছ থেকে জোর করে কিভাবে পদত্যাগ নেয়া হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে ফুয়াদ হোসেন কাদেরী বলেন, আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
courtesy: http://www.mzamin.com/details.php?nid=MTE5OTc=&ty=MA==&s=Mjc=&c=MQ==

0 comments:
Post a Comment