July 10, 2012

Crime Using Anti Corruption Commission

‘অভিযোগ ধামাচাপা দিতেই ঘুষ’ 

অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেতে টাকা দিয়েছেন এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী, সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী, বিআইডব্লিউটিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী, পুলিশের এসপি, দারোগা ও ওসি। দুদকে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে-এ কথা জানিয়ে ফোন করার পর পরই দুর্নীতিবাজরা যে কোনভাবে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করতেন। এ জন্য তারা নিজেরাই দফায় দফায় ফোন করে মোটা অঙ্কের টাকার অফার দিতেন। আপসরফা হলে দুর্র্র্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের নামে খোলা ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের একাউন্টে টাকা জমা পড়তো। এভাবে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় গ্রেপ্তারকৃত প্রতারক চক্রের সদস্য জিয়াউর রহমান ও ইস্রাফিল। তিন দিনের রিমান্ডে পুলিশের কাছে এসব তথ্য দিয়েছে তারা। চক্রের ২ সদস্যকে গত  বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে তাদের কদমতলী থানায় সোপর্দ করা হয়। প্রতারক চক্রের সদস্য জিয়াউর রহমান অষ্টম শ্রেণী পাস হয়েও নিজেকে দুদকের সহকারী পরিচালক সাহাবউদ্দীন বলে পরিচয় দিতো। ২০১০ সাল থেকে তারা এ প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। পুলিশ প্রতারকদের জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছে তাদের সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের কয়েকজন কর্মচারী জড়িত। তারাই মূলত তদন্তাধীন অভিযোগের তথ্য প্রতারকদের কাছে সরবরাহ করতো। কাজ সম্পূর্ণ হলে তারা পেতো কমিশন। পুলিশ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে জিয়াউর রহমান দুর্নীতি দমন কমিশনের কয়েকজন অসাধু কর্মচারীর নাম বলেছে যারা তাদের সঙ্গে জড়িত ছিল। তবে যারা দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছে তাদের সবার নাম ও পদবি বলতে পারেনি তারা। দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা বলে অর্থ আদায়ের জন্য ২০১১ সালে দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের নামে একাউন্ট খোলে তারা। ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের বিজয়নগর শাখায় হিসাবটি খোলা হয়। তবে টাকা জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা টাকা তুলে নিতো। ফলে ওই হিসাবে এখন স্থিতির পরিমাণ ৩ হাজার টাকার মতো বলে জানিয়েছে ব্যাংকের একটি সূত্র। হিসাবটি ফ্রিজ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারকরা জানিয়েছে, ব্যাংক হিসাব খোলার আগে তারা হাতে হাতে ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করতো। দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যালয়ের প্রধান ফটক থেকেও তারা অনেকের কাছে টাকা নিয়েছে। কিন্তু এটি অনিরাপদ এবং সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় তারা দুদক চেয়ারম্যানের নামে ব্যাংক হিসাব খোলে তারা। গোলাম রহমানের নামে ব্যাংক হিসাব খুলতে ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা সহায়তা করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, গত কয়েক মাসে তারা টাকা নিয়েছে-বিআইডব্লিউটিসি নারায়ণগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ বিভাগের মাদারীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী, নারায়ণগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমীর পরিচালক, চট্টগ্রামের ১টি থানার ওসি, ২ জন এসআই, বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২ সহকারী পরিচালক, একজন প্রকল্প পরিচালক, বিআরটিএ’র একজন ইন্সপেক্টর, ২ জন সহকারী পরিচালক ও ঢাকা মেডিকেলের একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নেতার কাছ থেকে। ব্যাংকে টাকা জমার হওয়ার পর পরই তারা এটিএম কার্ড দিয়ে টাকা তুলে নিত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কদমতলী থানার এসআই আল মামুন বলেন, এ প্রতারক চক্রের সদস্য ছিল ৩ জন। জিয়াউর ও ইস্রাফিল ছাড়া তাদের আরেক সদস্য ওমর কাজী মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ২-৩ মাস আগে ইতালি পালিয়ে গেছে। এ চক্রের নেতা জিয়াউর রহমান। আদায়কৃত টাকা দিয়ে সমপ্রতি একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি গড়েছে। গ্রেপ্তারকৃত জিয়াউর রহমান বলেছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে অভিযোগ থাকা ব্যক্তিদের শনাক্ত করতো তারা। এরপর টেলিফোন গাইড থেকে নম্বর নিয়ে ওই ব্যক্তিদের ফোন করা হতো। গ্রেপ্তারকৃত ইসরাফিল জানিয়েছে, সে মালিবাগে একটি কাঁচের দোকানে কাজ করতো। ২০১০ সালে জিয়ার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের কিছুদিন পর জিয়া তাকে এসএ পরিবহনের কাকরাইল শাখায় ২০ হাজার টাকা তুলে আনতে পাঠায়। টাকা আনলে জিয়া তাকে এক হাজার টাকা বকশিশ দেয়। কিছুদিন পর আবার এসএ পরিবহন থেকে আরও ২০ হাজার টাকা এনে দেয় সে। এবার জিয়া তাকে তিন হাজার টাকা দেয়। একদিন ইস্রাফিলকে একটি ব্যাংক হিসাব খুলে দিতে বলে জিয়া। কামরুল হক নামের ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের এক কর্মকর্তার রেফারেন্স দিয়ে গোলাম রহমানের নামে একাউন্ট খুলে দেয় ইস্রাফিল। একাউন্ট খোলার ১০ দিন পর ইস্রাফিল ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও চেক বইয়ের সব পাতায় স্বাক্ষর করে জিয়াকে দিয়ে দেয়। পুলিশ জানিয়েছে, প্রতারক চক্রের সদস্য জিয়াউর রহমান ওরফে জিয়ার পিতার নাম মৃত এছাহাক তালুকদার। তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিরকাটা তালুকদার বাড়ি। সে কদমতলী এলাকার ১১১, জুরাইন মেডিকেল রোডের জনৈক রব মোল্লার বাড়িতে ভাড়া থাকতো। চক্রের অপর সদস্য ইস্রাফিলের পিতার নাম বজলুর রহমান। তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থানার ভাষানচর খানবাড়িতে। রাজধানীর মালিবাগ  চৌধুরীপাড়ার ২৫/১/এ নম্বর বাড়িতে ভাড়া থাকতো।  দুদকের পরিচালক (অবলোকন ও মূল্যায়ন) মেজর আশিস সরকার জানিয়েছেন, দুর্নীতির অনুসন্ধানের কোন পর্যায়ে কাউকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুযোগ নেই। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ইচ্ছা করলেও তা করতে পারবেন না। কারণ একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুর্নীতির তদন্ত বা অনুসন্ধান চলে। দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান বিভাগের কর্মকর্তা স্কোয়াড্রন লিডার তাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, যদি কেউ দুদকের নাম ভাঙিয়ে অর্থ দাবি করে বা অভিযোগ থেকে অব্যাহতির প্রস্তাব দেয় তবে সঙ্গে সঙ্গে তা দুদককে জানানো উচিত। তাহলে দুদক দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে। র‌্যাব ১০-এর অধিনায়ক আমীর মজিদ জানিয়েছেন, এ ধরনের আরও কোন প্রতারক চক্র সক্রিয় আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে কারও কাছে তথ্য থাকলে র‌্যাবকে জানানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

Courtesy: http://www.mzamin.com/details.php?nid=MTI5MjU=&ty=MA==&s=Mjc=&c=MQ==

0 comments:

Post a Comment