টিআর-কাবিখা: এক জেলাতেই সাবাড় সাড়ে ১৬ কোটি টাকা

প্রকল্প থেকে অনেক দূরে চাল-গম। উপজেলা সদরেই সব শেষ। চাল ব্যবসায়ীদের
সিন্ডিকেট, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস, খাদ্য অফিস, আড়ালে থাকা
উপজেলার বড় কর্মকর্তা, কোথাও কোথাও জনপ্রতিনিধিদের ভাগ। সব মিলিয়ে সাবাড়
হয়ে যাচ্ছে বরাদ্দের তিন ভাগের দু’ভাগ। বাকি এক ভাগও প্রকল্প বা কাজের গোড়া
পর্যন্ত পৌঁছায় না। টেস্ট রিলিফ (টিআর)-এর ১ টন চালের সরকারি মূল্য ৩৪
হাজার ১৯৫ টাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রকল্পের বিপরীতে
বরাদ্দ দেয়া এই চালের মূল্য দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা।
সবচেয়ে কম মূল্য দেয়ার রেকর্ড হয়েছে সদর উপজেলায়। এখানে চালের মূল্য দেয়া
হয়েছে ১৩ হাজার টাকা। অর্ধেকের কমে চাল বিক্রি হলেও কাগজপত্রের হিসাব আবার
পাক্কা। নানাভাবে ৩৪ হাজার ১৯৫ টাকার হিসাবই মেলানো হচ্ছে। জেলার কয়েকটি
উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চালের এই
দর সাব্যস্ত করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। তাদের মূল্যের বাইরে চাল
বিক্রি করা কঠিন। উপজেলা খাদ্য অফিস, খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আছে
তাদের যোগসাজশ। অভিযোগ আছে প্রকল্প কমিটির লোকজন সরাসরি বরাদ্দ আনতে গেলে
তাদের শিকার হতে হয় নানা হেনস্তার। ধরিয়ে দেয়া হয় গুদামে রাখা পচা চাল। আর
ব্যবসায়ীদের দেয়া হয় ভাল চাল। এই চাল বিক্রি করে তারা সরকার নির্ধারিত
দামের কাছাকাছি টাকা ঠিকই বুঝে নেয়। কিন্তু প্রকল্পধারীদের মিলে অর্ধেকেরও
কম টাকা। এই টাকায় শেষমেশ কাজ আর হয় না। একই অবস্থা কাবিখা’র গমের। ২৫
হাজার টাকার গম ১৪-১৫ হাজার টাকা। সরজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নানা
কারসাজিতে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। পকেট ভরছে
পিআইও, ইউএনও, কোথাও কোথাও দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধিদের। অবশ্য
জনপ্রতিনিধিরা আড়ালে থেকে তাদের মনোনীতদের মাধ্যমে বুঝে নেন টাকার হিস্যা।
সব মিলিয়ে হরিলুটে প্রকল্প হয়ে ওঠে খোলা মাঠ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ২০১১-১২
অর্থবছরে টিআরের মোট বরাদ্দ এসেছে ৫৯৬৬ টন। ৩৮৩৩টি প্রকল্পের বিপরীতে দেয়া
হয় এই বরাদ্দ। এরমধ্যে বিশেষ ও সাধারণ ক্যাটিগরি রয়েছে। বরাদ্দকৃত এসব
চালের আর্থিক মূল্য প্রতিটন ৩৪ হাজার ১৯৫ টাকা হিসেবে ২০ কোটি ৪০ লাখ ৭
হাজার ৩৭০ টাকা। কিন্তু প্রকল্পধারীরা ১ টনের মূল্য পেয়েছে ১৫ হাজার টাকা।
সে হিসেবে ৫৯৬৬ টন চালের দাম আসে ৮ কোটি ৯৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বাকি ১১
কোটি ৪৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৭০ টাকা গায়েব। এর কোন হিসেব নেই। কাবিখার ৮৩১টি
প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয় ৬০৫৪ টন গম। এই বরাদ্দও আসে দুই
ক্যাটিগরিতে। সরকারি দর ২৫ হাজার টাকা হিসাবে এর মূল্য আসে ১৫ কোটি ১৩ লাখ
৫০ হাজার টাকা। বলা হচ্ছে, গমের মূল্য দেয়া হয়েছে ১৫ হাজার টাকা করে। সে
হিসেবে এই গম বিক্রি হয়েছে ৯ কোটি ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। এখানেও গায়েব প্রায়
৬ কোটি ৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা। টিআর-কাবিখা থেকে সব মিলিয়ে সিন্ডিকেটের
ধান্দা হয়েছে ১৬ কোটি ৫০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।
কে নির্ধারণ করলো এই দাম:
সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস। সেখানেই দেখা হয় বাসুদেব
ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। জানান, চান্দি নদীরপাড়
গোরস্থানের জন্য ২ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছিলেন। বিক্রি করেছেন ১৫ হাজার টাকা
করে ৩০ হাজার টাকা। জাহাঙ্গীর বলেন, প্রতিবাদ করেছিলেন এত কম দাম দেয়ায়।
কিন্তু লাভ হয়নি। মনোনীত চাল ব্যবসায়ী বলে দেন, অন্য জায়গায় গিয়ে বিক্রি
করেন। অফিস সহকারী সেলিম মিয়া বলেন, এটা একটা রহস্য। চাল-গমের দামডা কারা
ঠিক করে সেইটা আগে খুইজ্জা বাইর করেন। সেলিম বলেন, আমরার কথা অইল জাগাত মাল
নিবা কাজ করবা। এখানেই জানা গেল, বরাদ্দের ডিও দেয়ার ১৫ দিন আগেও কেউ কেউ
(প্রকল্পধারী) টাকা নিয়ে যান চাল-গম ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। নাসিরনগর উপজেলা
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. হোসেনও অনুরোধ জানান, আসল রহস্য খুঁজে
বের করার। বলেন, ভাই চাল নিয়ে আর পারি না। চাল বিক্রি হয় সাড়ে ১৪ হাজার
থেকে ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু আমাদের তো সরকারি রেট বিভিন্ন ভাউচার দিয়ে
সমন্বয় করতে হয়। দাম কম পাওয়ায় প্রকল্প চেয়ারম্যানরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের একটি ঘটনাও জানান এই কর্মকর্তা।
বলেন, ৭-৮ মাস আগের ঘটনা। স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার জন্য ১২ টন চাল বরাদ্দ
দেন এমপি স্যার। ভাল দামে যাতে চাল বিক্রি করতে পারেন সেজন্য আমি
প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাঠাই।
তিনি সেখানে নাসিরনগরের চেয়ে ২ হাজার টাকা বেশিতে বিক্রির ব্যবস্থা করেন।
কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যবসায়ী এই ডিও নিয়ে নাসিরনগর এলে তাকে গুদাম থেকে
চাল তুলতে দেয়া হয়নি। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছেই টন প্রতি ২ হাজার
টাকা করে কমে বিক্রি করতে হয়। সূত্র জানায়, এখানে চাল-ধান ক্রয়ের ব্যবসা
করেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি মনিরের ছোট ভাই ও যুবলীগ নেতা অঞ্জনসহ
৮-১০ জন। নবীনগরের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম, সরাইল, সদর
ও বিজয়নগর উপজেলার একই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা
মো. মিজানুর রহমান, কসবা ও আশুগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার
দায়িত্বে থাকা সৈয়দ আরিফুল হক, আখাউড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা
মো. তাজুল ইসলাম, বাঞ্ছারামপুরের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মফিদুল আলম
জানান, দাম কে ঠিক করে তা তাদের জানা নেই। নবীনগরের প্রকল্প বাস্তবায়ন
কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম বলেন, বাজারের দামের সঙ্গে সরকারের দামের
পার্থক্য আছে ঠিক। কিন্তু এতে আমাদের কি করার আছে। আমাদের তো ব্যবসায়ীদের
সঙ্গে কোন কানেকশন নেই। আখাউড়ার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. তাজুল
ইসলাম বলেন, যারা বিক্রি করবে আর যারা কিনবে দর-দামের বিষয়টি তাদের
ব্যাপার। এ ব্যাপারে তারা স্বাধীন। বাঞ্ছারামপুরের প্রকল্প বাস্তবায়ন
কর্মকর্তা মফিদুল আলম বলেন, পাবলিক কি করে তা তো আমার দেখার বিষয় না।
তাদেরকে বলে দেই নিজ উদ্যোগে যাতে উঠিয়ে নেন।
সব ব্যবসায়ীর এক রা:
চালের মান ভাল না। মোটা। পচা। গরুকে খাওয়ানোর যোগ্যও না। এই এক আওয়াজ
ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একেক উপজেলায়
দাম একেক রকম। স্থানীয় সিন্ডিকেটই মনগড়া মতো এই দাম নির্ধারণ করে। সূত্র
জানিয়েছে, শুধু তাই নয় তারা যার কাছ থেকে যত দিয়ে পারে তত দিয়েই চাল কিনে
নেয়। সরকারি রেটের ধারও ধারছে না এরা। সরকারি রেটে চাল প্রতি টন ৩৪ হাজার
১৯৫ টাকা। আর গম ২৫ হাজার ১২ টাকা। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (সরবরাহ) মোহাম্মদ আবদুস সোবহান স্বাক্ষরিত এক পত্রে
চাল ও গমের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি জানানো হয়। এই চিঠি আছে সব
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার ফাইলে। অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা
নিজেও এই রেট জানেন না। এখানকার ৯ উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার
মধ্যে ২-১ জন ছাড়া কেউ সরকারি রেট ঠিক করে বলতে পারেননি। আর প্রকল্প
মালিকরা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস থেকে ডিও নিয়ে সোজা যান
ব্যবসায়ীদের কাছে। ডানে-বায়ে খোঁজও নেন না। সরকারি মূল্য জানা তো দূরে থাক।
তাদের জানা আছে ব্যবসায়ীদের নির্ধারণ করা রেট। এ হিসাব মতেই টাকা গুনে
নিয়ে যান। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা জানান, নিয়ম হচ্ছে প্রকল্প কমিটির
সভাপতি বা চেয়ারম্যান ডিও নিয়ে যাবেন প্রথমে খাদ্য অফিসে। এরপর খাদ্য
গুদামে। সেখান থেকে মাল উত্তোলন করে কাজ করবেন। এটাই নিয়ম। কোন কোন উপজেলায়
বরাদ্দপ্রাপ্তরা খাদ্য অফিস বা গুদাম পর্যন্ত গেলেও ডিওটি সেখানে জমা করে
বলে আসেন তিনি কার কাছে চাল বিক্রি করেছেন। গুদামে তা নোট রাখা হয়। পরে ওই
ব্যবসায়ী চাল উঠিয়ে নেন। ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়েই কথা বলি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
বিভিন্ন উপজেলার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। নাসিরনগরের ইসলাম ট্রেডার্স এর মালিক
হান্নান জানান, তাদের এখানে শুরুতে চালের দাম ছিল ২১ হাজার টাকা। আস্তে
আস্তে তা নেমে আসে সাড়ে ১৪ হাজার টাকায়। বাঞ্ছারামপুরের উজানচরের তাজুল
ইসলাম চাল কিনেছেন ১৫ হাজার টাকায়। কিন্তু এ থেকে আবার এক-দেড় হাজার টাকা
অফিস খরচ কেটে রেখে প্রকল্পধারী (ব্যবসায়ীদের ভাষায় পার্টি)কে দেয়া হয় ১৩
থেকে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। অগ্রিম কিনলে দাম আরও কম দেয়া হয় বলে জানান এই
ব্যবসায়ী। তাজুল ইসলাম কিনেছেন ১৯ টন চাল। তাজুল ছাড়াও এই উপজেলায় চাল
কিনেছেন বাঁশবাড়ি গ্রামের আলী আহমদ, আসাদনগরের রশিদ, দুর্গারামপুরের অদুদ,
উজানচরের সঞ্জিত, বুধাইরকান্দির নূরুল ইসলাম, বাঞ্ছারামপুর সদরের হাসু। তবে
সবচেয়ে বেশি চাল কিনেছেন আলী আহমদ। মোট বরাদ্দের অর্ধেকই কিনেছেন তিনি।
উজানচরের সঞ্জিত জানান, চালের চাহিদা কম। ১৪-১৫ হাজার টাকা টন কিনেছেন
তিনি। সব খরচ বাদ দিয়ে টন প্রতি তার লাভ হয়েছে ৫শ’ টাকা করে। বলেন কিনছি
কমে, বেচছিও কমে। আখাউড়ার ব্যবসায়ী আফু মিয়া জানান, প্রথম দিকে তাদের এখানে
দর ছিল ১৫ হাজার টাকা। পরে তা নেমে আসে ১৪ থেকে সাড়ে ১৪ হাজার টাকায়।
নবীনগরের ব্যবসায়ী সুবল সাহা। তার সঙ্গে আছেন আলমগীর ও হাফেজ নামের আরও
দু’জন। তিন জনের সিন্ডিকেট। এছাড়াও এখানে চাল কিনেছেন জসিম উদ্দিন আহমদ ও
লিয়াকত আলী। সুবল সাহা জানান, প্রথমে তাদের এখানে রেট ছিল ১৬ হাজার টাকা।
এরপর তা নেমে আসে ১৫ হাজারে। সর্বশেষ সাড়ে ১৪ হাজারে। বলেন, রেট একেকবার
একেক রকম হয়। লিয়াকত বলেন, সরকারি রেট তো ঠিকই আছে। বাজারের দর দেহেন না।
কসবার আইয়ুব জানান, তাদের এখানে চালের দাম ছিল ১৬ হাজার। তবে পার্টিরে দেয়া
অইছে ১৫ হাজার। সরাইলের চাল ব্যবসায়ী মরম মিয়া জানান, ১৫ হাজার টাকা দরে
চাল কিনেছেন তারা। এ থেকে আবার খরচও আছে। বলেন, ব্যবসায়ী ৪ জন। মিল নাই।
তার আক্ষেপ মিল থাকলে আরও সুবিধে করতে পারতেন। তবে সবচেয়ে কম দর দেয়া হয়েছে
সদরে। মাত্র ১৩ হাজার টাকায় ১ টন চাল বিক্রি করতে হয়েছে প্রকল্প মালিকদের।
এখানকার ব্যবসায়ী আলী মিয়া বলেন, এবার চালের মান খারাপ ছিল। গত বছরের
পুরাতন চাল সাপ্লাই দেয়া অইছে। সারা দেশের মানুষই জানে চাল খারাপের খবর।
তবে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো. শাহজাহান ভূঁইয়া নিম্নমানের চাল সরবরাহের
অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, আমার গোডাউনে কোন নিম্নমানের চাল নেই। যদি কেউ
এরকম বলে তাকে বলেন চালের নমুনা দিতে। আমি তা পরীক্ষার জন্য ল্যারেটরিতে
পাঠাবো। বরাদ্দ প্রাপ্তরা সরাসরি গোডাউনে গেলে নিম্নমানের চাল সরবরাহের
অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি। বলেন, আপনি নিজে গিয়ে দেখেন।
যেভাবে
ভাগ-বাটোয়ারা: চালের দাম-মান যাই হোক ঘাটে ঘাটে টাকা দেয়ার কোন হেরফের নেই।
বাঞ্ছারামপুরের এক ব্যবসায়ী জানান, পিআইও অফিসে খরচ দিতে হয়েছে তাদের এক
হাজার টাকা। মাস্টার রোল ২শ’ টাকা, খাদ্য অফিস ২শ’ টাকা, গোডাউন খরচ ৭শ’
টাকা, লেবার ১৬০ টাকা। আখাউড়ার এক ব্যবসায়ী জানান, পিআইও অফিসে দেড় হাজার
টাকা খরচ দিতে হয়েছে। একেক উপজেলায় এই খরচও একেক রকম। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে
পিআইও অফিসে সব মিলিয়ে খরচ দিতে হয় ২০০০ টাকা। নবীনগরে ১৭শ’ থেকে ২০০০
টাকা। ব্যবসায়ী লিয়াকত আলী জানান, এর বাইরে খাদ্য গুদামে ৪শ’ টাকা, খাদ্য
কর্মকর্তা ১শ’ টাকা, খাদ্য অফিসের কর্মচারীদের টন প্রতি ৫০ টাকা করে খরচ
দিতে হয়। কসবার ব্যবসায়ী আইয়ুব জানান, তাদের পিআইও অফিসে দিতে হয়েছে ১
হাজার টাকা। সরাইলের মরম মিয়া জানান, তাদের দিতে হয়েছে বিক্রয় মূল্যের
শতকরা ১৫ ভাগ। এই টাকা যায় কোথায়? পিআইও অফিসে যে টাকা রাখা হয় বা চাল
ব্যবসায়ীরা প্রকল্প মালিকদের বিভিন্ন খরচের কথা বলে কমিয়ে যে টাকা দেন সেই
টাকার মালিক কি শুধু তারা একাই হোন। নাকি এলাকার সংসদ সদস্য, উপজেলা
চেয়ারম্যানও পান সেই ভাগ। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন বিশেষ বরাদ্দটি হয় সংসদ
সদস্যদের। আর সাধারণ বরাদ্দ আসে উপজেলার অনুকূলে। সরাইলের মরম মিয়া বলেন,
পিআইও অফিস আমাদের কাছ থেকেও নেয়, আবার সরাসরি পার্টির কাছ থেকেও নেয়। এরপর
সে টাকা কি হয় তা জানি না। জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা গুদাম থেকে চাল
নির্বিঘ্নে এদিক সেদিক নিতে স্থানীয় থানা পুলিশকেও টন পিছু একটি অঙ্কের
টাকা দেন। যদি এক হাজার টাকা করেও ধরা হয় তাহলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৯ উপজেলার
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার পকেটে সরাসরি গেছে ১২ লক্ষাধিক টাকা। ১২
হাজার ২০ টন চাল-গম এর বিপরীতে এই টাকা তাদের পকেটে গেছে। চাল-গম কেনার
ব্যবসায়ীরা স্থানীয় সংসদ সদস্য বা সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতাদের মনোনীত
হয়ে থাকেন। তাদের কাছ থেকে থোক একটি অংশ চলে যায় ওইসব জন প্রতিনিধির পকেটে।
প্রকল্প কর্মকর্তার পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ভাগ পাওয়ার
বিষয়টিও ওপেনসিক্রেট। বরাদ্দ বিতরণের সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা
থাকেন ইউএনও’দের কাছে কাছে। তাদের সব হিসাব-নিকাশ বোঝাতে হয় ইউএনও’র কাছে।
কসবার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুলের বক্তব্যেও এমনটা স্পষ্ট।
জানান, ইউএনও’র হুকুম ছাড়া প্রকল্পের তালিকাও দিতে পারবেন না তিনি।
তালিকা
নিষেধ: প্রকল্পের তালিকা দেখানো নিষেধ। তালিকা চাইলেই শুরু হয় নানা
টালবাহানা। কসবার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছে তার এলাকার তালিকা
চাইতেই বলেন, এটা ইউএনও সাহেবের কাছে আছে। তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আবার
বলেন, মৌখিকভাবে চাইলেই তো হবে না। লিখিত আবেদন করেন। স্থানীয় সাংবাদিকরা
জানান, তালিকা নিষেধ। নবীনগরের তালিকার জন্য একমাস মাস ধরে ঘুরে হয়রান
হচ্ছেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। তাকে পিআইও বলেছেন, তালিকা দিতে ইউএনও’র
অনুমতি লাগবে। তালিকা না দেয়ার রহস্যের কথাও জানিয়েছেন সেখানকার এক
সাংবাদিক। বলেন, টিআরের প্রকল্প দিয়ে ইউএনও’র বাসায় হাই কমোড বসানো হয়েছে।
থানার টোল চেয়ার কেনা হয়েছে। এমন গোপন আরও অনেক প্রকল্পই থাকে তাদের। তাই
তালিকা নিয়ে কঠোর এই গোপনীয়তা তাদের।
Courtesy: http://www.mzamin.com/details.php?nid=MTI5MzQ=&ty=MA==&s=MTg=&c=MQ==