ভারতের প্রখ্যাত সমাজ কর্মী আন্না হাজারে জেল ত্যাগে অস্বীকৃতি জানালে দিল্লির তিহার কারাগার কর্তৃপক্ষ তাকে একটি রুম বরাদ্দ দেয়। গত রাত তিনি কারাগারেই কাটিয়েছেন। কারাগারে তিনি অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। ৭৪ বছর বয়স্ক এ গান্ধীবাদী সমাজ কর্মী রাতারাতি তারকা খ্যাতি অর্জন করেছেন। গোটা ভারত জুড়ে তিনি হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন। তিহার কারাগারের বাইরে তার অগণিত সমর্থক ভিড় জমিয়েছে। আরো অনেকে তার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে অনশন করার ঘোষণা দিয়েছেন। আজ বুধবার দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে একথা বলা হয়।
আন্না হাজারেকে নিয়ে কী করা যায় এ নিয়ে ভারত সরকার দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে। গতকাল তাকে গ্রেফতার করার ১২ ঘণ্টার মধ্যে জনতার ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়ার মুখে মুক্তি দেয়া হয়। তার সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। তবে আন্না ঘৃণাভরে তাকে মুক্তিদানের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, সরকার একটি শক্তিশালী লোকপাল বিল পাসে তাকে নিঃশর্তে প্রতিবাদ চালিয়ে যাবার সুযোগ দিলে তিনি তিহার কারাগার থেকে বের হবেন। অন্যথায় কারাগারে অনশন করবেন।সরকার তাকে কারাগারে অবস্থান করার অনুমতি দিতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে সরকারকে জনগণের তীব্র প্রতিবাদ বিক্ষোভ মোকাবিলা করতে হবে। আবার তাকে জয়প্রকাশ নারায়ণ পার্কে অনশন করার অনুমতিও দিতে পারে। এখন অনুমতি দেয়া হলে সরকারের পূর্ববর্তী অবস্থান অযৌক্তিক ও ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হবে। আন্নাকে গ্রেফতারে সরকারের সিদ্ধান্ত যথেষ্ট সুচিন্তিত বলে মনে হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ ভেবেছিল তাকে অনির্দিষ্টকাল অনশন চালিয়ে যাবার অনুমতি দেয়া হলে সরকারের জন্য বিরাট সমস্যা হবে। তাকে গ্রেফতার করে অনশন কর্মসূচি বাঞ্ছাল করে দেয়া হলে ছিঁটে ফোটা বিক্ষোভ হবে। তবে এত ব্যাপক বিক্ষোভ হবে এবং আন্নার সমর্থনে এভাবে হাজার হাজার মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়বে, সরকার তা কল্পনাও করতে পারেনি। দিলি্লতে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ এবং মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। আন্না হাজারের প্রতি সংহতি জানিয়ে আজ বুধবার দিলি্লতে অটো রিক্সা ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। তাতে মনে হচ্ছে হাজারের সমর্থক এখন শুধু মধ্যবিত্ত শ্রেণী নয়, সমাজের নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীতেও তার ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। দেশের সর্বত্র সমর্থকরা ভারতের জাতীয় পতাকা আন্দোলিত করে তার প্রতি সমর্থন প্রকাশ করছে। হাজারের প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দেখে কংগ্রেসের অনেকের ভুল ভাঙ্গতে শুরু করেছে। দলের সাধারণ সম্পাদক রাহুল গান্ধী হাজারের সঙ্গে সংঘাতে না যেতে সরকারকে বারণ করছেন। শোনা গেছে, গতকাল তিনি প্রধানমন্ত্রী মনমেহান সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তার আগে তিনি দলের প্রবীণ নেতা অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি. চিদাম্বরম ও কমল নাথের সঙ্গেও বৈঠকে মিলিত হন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদাম্বরম হাজারেকে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী এ সমাজ কর্মী আইন অমান্য করে গ্রেফতারের যোগ্য অপরাধ করেছেন।

0 comments:
Post a Comment