August 13, 2011

প্রধান বিচারপতি নিয়োগ: বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব টিআইবির


প্রধান বিচারপতি ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং ১২টি সংবিধিবদ্ধ কমিশনের স্বাধীনতা ও স্বশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনয়নের জন্য সরকারকে বিরোধী দল ও স্পিকারের সমন্বয়ে একটি বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইনটারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবিধানিক সংবিধিবদ্ধ কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রেক্ষাপট ও প্রস্তাবনা-শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ প্রস্তাব করে টিআইবি।
টিআইবির নির্বাহি কর্মকর্তা ড. ইফতেখারুজ্জামানের পরিচালনায় এবং টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল উপস্থাপিত কার্যপত্রকে একটি সহায়ক গাইডলাইন হিসেবে উল্ল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা হ্রাস এবং বিভিন্ন কমিশন প্রধানদের নিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রী কি পরামর্শ দিলেন তথ্য কমিশনের মাধ্যমে জনগণকে তা জানানোর সুপারিশ করা হয়। 
সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বাছাই কমিটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেবল একটি নাম সুপারিশ করবে এবং নিয়োগগুলো অবশ্যই নির্দলীয় হতে হবে। সেইসাথে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় প্রধানকে বাছাই কমিটির সভায় উপস্থিত থাকার কথা সুপারিশে উল্লেখ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ কমিশনগুলোকে রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, সংসদীয় বিশেষ কমিটিতে সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যদের ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে এ ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নাগরিক সমাজকে সম্পৃক্ত করার উপর জোর দিয়ে তিনি কমিশনগুলোর প্রতি জনগণের অনাস্থার বিষয়টি প্রচারণার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান।
ব্রাক ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের পরিচালক ড. শাহ্দীন মালিক তার বক্তব্যে বাছাই কমিটির সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হতে হবে এবং প্রাথমিক বাছাই শেষে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করার মাধ্যমে জনগণের মতামত গ্রহণ করার কথা বলেন। সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের দায়িত্ব যে নির্বাহি বিভাগের এখতিয়ারভুক্ত নয় সেটি তাদেরকে বুঝতে হবে।
সাংবাদিক এবিএম মুসা বলেন, বাছাই কমিটি- সরকার, রাষ্ট্রপতি যাই বলা হোক না কেন সকল নিয়োগ দেয়া হয় একক সিদ্ধান্তে। এই নিয়োগগুলো জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে কি না তা দেখতে হবে। এ বিষয়ে জনমত গড়ে তোলার উপর জোর দেন তিনি।
বাংলাদেশে বিরাজমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহি পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কমিশনগুলোর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ তথা ক্ষমতাসীন সরকারের প্রভাব বিস্তারের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিক ও সহজাত কার্যক্রম ব্যাহত হয়। তিনি বলেন, সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে যতখানি কার্যকর দেখতে চায় এ প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক ততখানিই কার্যকর হবে। একই সাথে কমিশনগুলোর কর্ণধারদের পেশাগত যোগ্যতা, উৎকর্ষ, দলীয় ও সরকারি প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষভাবে এবং ভয় ও করুণার মুখাপেক্ষী না হয়ে বস্তুনিষ্ঠতার সাথে দায়িত্ব পালনের উপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
টিআইবির কর্মকর্তা শাম্মী লায়লা ইসলাম উপস্থাপিত কার্যপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশের বিদ্যমান কমিশনগুলোর নিরপেক্ষতা এবং কার্যকারিতাকে রাজনৈতিক ও সরকারি প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য কমিশন সংশ্লিষ্ট আইনে বর্ণিত নিয়োগ সংক্রান্ত বিধিমালা সংশোধন, সংযোজন ও পরিবর্তন করা একান্ত প্রয়োজন।
বাংলাদেশের বিদ্যমান কমিশন নিয়োগের প্রেক্ষাপট, প্রচলিত আইনের সীমাবদ্ধতা বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন দেশের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে কার্যপত্রে বলা হয়, জাতীয় সংসদের সরকার ও বিরোধীদলের সমান সংখ্যক সদস্য ও স্পিকারের সমন্বয়ে ৫_৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠন করতে হবে। এই সংসদীয় কমিটি প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য একটি সার্চ কমিটি গঠন করবে এবং তাদের প্রদত্ত তালিকা প্রাপ্তির পর সংসদীয় কমিটি পুনরায় সকল তথ্য যাচাই ও পুনঃতদন্তের পর গণশুনানির আয়োজনপূর্বক সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অভিমত অনুসারে যোগ্য প্রার্থীর সংক্ষিপ্ত তালিকা অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির বরাবরে প্রেরণ করবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাহি বিভাগের পরামর্শ ব্যতিরেকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
১৪টি কমিশনের মধ্যে আলোচ্য কার্যপত্রে ৫টি কমিশনের (নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন ও তথ্য কমিশন) নিয়োগ সংক্রান্ত আইন পর্যালোচনা করে টিআইবি'র পক্ষ থেকে ১০ দফা সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংশোধনী আনতে হবে।
ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে কার্যপত্রে উল্ল্লেখ করা হয় বাংলাদেশেও একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, দলনিরপেক্ষ এবং সর্বজনগ্রাহ্য নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রবর্তন করা প্রয়োজন।

0 comments:

Post a Comment