কয়েকদিন আগে এক সন্ধ্যায় আমার জ্যেষ্ঠতম ভাই এক সড়ক দূর্ঘটনায় পতিত হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর আমরা লাশ ফেরত নিয়ে আসতে চাইলে তিনি অপারগতা জানিয়ে বলেন যে, এ মুহুর্তে তাঁর করার কিছুই নেই। যা করার আইনানুগভাবে করতে হবে। সেই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ এবং বিহ্বল আমরা বারবার অনুনুয় বিনয় করলাম কিন্তু কোন লাভ হয় নি। কিছুক্ষণ পর কয়েকজন পুলিশ আসলেন । তারা মৃতের সাথে আমাদের সস্পর্কের প্রমাণ, দূর্ঘটনা নাকি হত্যা ইত্যাদি নানা বিষয়ক প্রশ্ন করতে থাকে- যা আমাদের মধ্যে ভীতি এবং হতাশার সঞ্চার করে। আমরা যেকোন মুচলেকা দিয়ে লাশ ফিরিয়ে নিতে চাই ; কিন্ত তারা ‘পোস্টমর্টেম’-যা হবে আবার পরদিন-ছাড়া লাশ ফেরত দিবেনা।
বাধ্য হয়ে স্থানীয় মাননীয় সংসদ সদস্যের সহায়তা নিই। তিনি ডিসিকে ফোন করে দেন এবং একটি চিঠি দিয়ে দেন। আমরা চিঠিটি নিয়ে রাতে ডিসি’র বাসায় যাই। ডিসি’র বাসার গেটে কর্তব্যরত দারোয়ান ঢুকতে দেবেনা,- ডিসি বাসায় নাই, এই বলে। ডিসি কোথায় আছে তাও তিনি জানেন না। এরপর আমাদের এক সহযোগী তাকে কিছু ‘নগদ নারায়ন’ গছিয়ে দিলে তিনি গেট খুলে দিয়ে একদম বাসার ভেতরে নিয়ে যান। ডিসি সাহেব এসে ‘তদন্ত সাপেক্ষে লাশ পোস্টমর্টেম ছাড়াই ফেরৎ’ দেয়ার আদেশ দেন। এই আদেশ নিয়ে হাসপাতালে এসে পুলিশকে দেয়া হয়, কিন্তু এরপরও তাদের মধ্যে কোন চাঞ্চল্য নেই। আগের মতই নির্বিকার, এখানে-ওখানে ফোন করেন, নিজেরা গল্প-গুজব করেন কিন্তু লাশ ফেরৎ এর কোন তৎপরতা দেখান না। বরঞ্চ নানা টালবাহানা এবং সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন। তখন রাত প্রায় বারটা। এত রাতে লাশ দেয়া যাবে না, আইনগত অসুবিধা আছে-আরো আরো কিছু বলতে থাকেন। এরপর তাদের সাথে ‘রফা’ হয়। ‘রফা’ হওযার সাথে সাথে ত্বরিৎ গতিতে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এতক্ষণ কতরকমের অসুবিধা এবং আইনী বাধার কথা শুনিয়েছেন তা সব এক নিমিষেই উবে গেল।
লাশ নিয়ে আসা হলো, দাফন-কাফনের প্রস্তুতি চলছে। এরমধ্যে স্থানীয় থানা থেকে লোক এসে হাজির। পরদিন পুলিশ তদন্ত করবে, পুলিশ না আসা পর্যন্ত, তদন্দকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেন লাশ দাফন করা না হয়,-এই নির্দেশ দিয়ে গেলেন। ততক্ষনে বুঝলাম শুরু হলো অমানিশার আর এক পালা।
পরদিন স্থানীয় থানা থেকে পুলিশ আর আসে না। এদিকে সময় গড়িয়ে যায়। লাশ দাফনের সময় পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে থানা থেকে ফোন করা হলো থানায় যাওয়ার জন্য। থানায় যাওয়া মানেই আবার উদ্ভট কিছু প্রশ্নের সম্মূখীন হওয়া কিন্তু একটি শোকসন্তপ্ত পরিবারের পক্ষে সেমুহুর্তে পুলিশের পিত্তি গরম করা প্রশ্নের সম্মূখীন হওয়ার মানসিকতা নেই,- এই ভেবে থানায় যাওয়ার সময়টা পরিবর্তন করতে বলার অপরাধে বিভিন্ন অশ্রাব্য এবং রুঢ় কথা শুনতে হলো তাদের কাছ থেকে। অগত্যা থানায় গিয়ে তদন্তের নামে যা হলো তার নাম ‘রফা’। এই ‘রফা’র পরপরই লাশ দাফনের অনুমতি মেলে।
আমরা নিজেরা থানায় কোন মামলা করিনি, কোন অভিযোগ দায়ের করিনি। তাতেই আমাদেরকে পুলিশের সাথে বিভিন্ন পয়েন্টে ‘রফা’ করতে হয়েছে। মামলা করা হলে না জানি আরো কতভাবে, কতমূল্যে ‘রফা’ করতে হতো।
লাশ দাফনের পরদিন থেকে শুরু হলো অন্য ধরণের খেলা। আমরা কোন মামলা করিনি তারপরও ‘দরদী’ সেজে স্থানীয় কিছু দুষ্টু চরিত্রের লোক এসে থানায় কেস করার জন্য আমাদের প্ররোচিত করলেন। কেহবা আবার আপোষ করে কিছুু ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করে দেবেন বলেও আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তাদের কারোই আসল মোটিভ সুবিধার বা সৎ ছিলো- একথা বিশ্বাস করার আমার কোন কারণ নেই। বুঝলাম, মানুষ মারা গেলে কিছু লোক/কিছু গোষ্ঠির বোধ হয় আয়ের একটা পথ খুলে যায়। আর তা যদি হয় কোন অপঘাতে মৃত্যু, তাহলে এদের এই শোষণ প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয় সরকারী বিভিন্ন এজেন্সী, আইন আদালত, বিধি বিধান।
এর মধ্যে স্থানীয় এক মাদ্রাসা থেকে প্রস্তাব পাঠানো হলো এই বলে যে, আমরা সম্মত হলে তারা আমাদের পক্ষ হয়ে ‘বাস মালিক সমিতি’র কাছে দেন দরবার করে মাদ্রাসার জন্য মৃত ব্যক্তির নামে কিছু ক্ষতিপূরণ আদায় করবে। আর যেহেতু এই টাকা মাদ্রাসায় যাবে তাই মৃত ব্যক্তি কেয়ামত পর্যন্ত ‘ছোয়াব” পেতে থাকবে। কিন্তু ঘরপোড়া গরু আমরা আর কোন ঝামেলায় যেতে না চাওয়ায় তা প্রত্যাক্ষান করলাম।
শোকাতুর মৃতের পরিবারের কোমল মনোভাবের সুযোগে গ্রামীণ সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তি বা গোষ্ঠি মৃতের পরিবারকে একধরণের শোষন করে থকে। এরমধ্যে একটি গোষ্ঠি আছে যারা ধর্মীয় রীতিনীতির বাতাবরণে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের নামে টাকা-পয়সা পাওয়া বা ভোজন পাওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকে। মৃতের পরিবার এর মানষিক অবস্থার কারণে কোনরূপ ন্যায়/অন্যায় যৌক্তিক অযৌক্তিক বিচার বিশ্লেষন করার সুযোগ থাকেনা ফলে তারাও সামর্থ অনুযায়ী এদের আবদার রক্ষা করে থাকে। এরা আবার নিজ স্বার্থে মোটামুটি সংঘবদ্ধ । এদের আবদারে সম্মত না হলে আবার সমাজে ‘হাসাহাসি-কানাকানি’ করে থাকে। ফলে কোন কোন ক্ষেত্রে অনিচ্ছা সত্বেও এই সব লৌকিক আচার আচরন পালন করতে হলো।
বাধ্য হয়ে স্থানীয় মাননীয় সংসদ সদস্যের সহায়তা নিই। তিনি ডিসিকে ফোন করে দেন এবং একটি চিঠি দিয়ে দেন। আমরা চিঠিটি নিয়ে রাতে ডিসি’র বাসায় যাই। ডিসি’র বাসার গেটে কর্তব্যরত দারোয়ান ঢুকতে দেবেনা,- ডিসি বাসায় নাই, এই বলে। ডিসি কোথায় আছে তাও তিনি জানেন না। এরপর আমাদের এক সহযোগী তাকে কিছু ‘নগদ নারায়ন’ গছিয়ে দিলে তিনি গেট খুলে দিয়ে একদম বাসার ভেতরে নিয়ে যান। ডিসি সাহেব এসে ‘তদন্ত সাপেক্ষে লাশ পোস্টমর্টেম ছাড়াই ফেরৎ’ দেয়ার আদেশ দেন। এই আদেশ নিয়ে হাসপাতালে এসে পুলিশকে দেয়া হয়, কিন্তু এরপরও তাদের মধ্যে কোন চাঞ্চল্য নেই। আগের মতই নির্বিকার, এখানে-ওখানে ফোন করেন, নিজেরা গল্প-গুজব করেন কিন্তু লাশ ফেরৎ এর কোন তৎপরতা দেখান না। বরঞ্চ নানা টালবাহানা এবং সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন। তখন রাত প্রায় বারটা। এত রাতে লাশ দেয়া যাবে না, আইনগত অসুবিধা আছে-আরো আরো কিছু বলতে থাকেন। এরপর তাদের সাথে ‘রফা’ হয়। ‘রফা’ হওযার সাথে সাথে ত্বরিৎ গতিতে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এতক্ষণ কতরকমের অসুবিধা এবং আইনী বাধার কথা শুনিয়েছেন তা সব এক নিমিষেই উবে গেল।
লাশ নিয়ে আসা হলো, দাফন-কাফনের প্রস্তুতি চলছে। এরমধ্যে স্থানীয় থানা থেকে লোক এসে হাজির। পরদিন পুলিশ তদন্ত করবে, পুলিশ না আসা পর্যন্ত, তদন্দকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেন লাশ দাফন করা না হয়,-এই নির্দেশ দিয়ে গেলেন। ততক্ষনে বুঝলাম শুরু হলো অমানিশার আর এক পালা।
পরদিন স্থানীয় থানা থেকে পুলিশ আর আসে না। এদিকে সময় গড়িয়ে যায়। লাশ দাফনের সময় পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে থানা থেকে ফোন করা হলো থানায় যাওয়ার জন্য। থানায় যাওয়া মানেই আবার উদ্ভট কিছু প্রশ্নের সম্মূখীন হওয়া কিন্তু একটি শোকসন্তপ্ত পরিবারের পক্ষে সেমুহুর্তে পুলিশের পিত্তি গরম করা প্রশ্নের সম্মূখীন হওয়ার মানসিকতা নেই,- এই ভেবে থানায় যাওয়ার সময়টা পরিবর্তন করতে বলার অপরাধে বিভিন্ন অশ্রাব্য এবং রুঢ় কথা শুনতে হলো তাদের কাছ থেকে। অগত্যা থানায় গিয়ে তদন্তের নামে যা হলো তার নাম ‘রফা’। এই ‘রফা’র পরপরই লাশ দাফনের অনুমতি মেলে।
আমরা নিজেরা থানায় কোন মামলা করিনি, কোন অভিযোগ দায়ের করিনি। তাতেই আমাদেরকে পুলিশের সাথে বিভিন্ন পয়েন্টে ‘রফা’ করতে হয়েছে। মামলা করা হলে না জানি আরো কতভাবে, কতমূল্যে ‘রফা’ করতে হতো।
লাশ দাফনের পরদিন থেকে শুরু হলো অন্য ধরণের খেলা। আমরা কোন মামলা করিনি তারপরও ‘দরদী’ সেজে স্থানীয় কিছু দুষ্টু চরিত্রের লোক এসে থানায় কেস করার জন্য আমাদের প্ররোচিত করলেন। কেহবা আবার আপোষ করে কিছুু ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করে দেবেন বলেও আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তাদের কারোই আসল মোটিভ সুবিধার বা সৎ ছিলো- একথা বিশ্বাস করার আমার কোন কারণ নেই। বুঝলাম, মানুষ মারা গেলে কিছু লোক/কিছু গোষ্ঠির বোধ হয় আয়ের একটা পথ খুলে যায়। আর তা যদি হয় কোন অপঘাতে মৃত্যু, তাহলে এদের এই শোষণ প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয় সরকারী বিভিন্ন এজেন্সী, আইন আদালত, বিধি বিধান।
এর মধ্যে স্থানীয় এক মাদ্রাসা থেকে প্রস্তাব পাঠানো হলো এই বলে যে, আমরা সম্মত হলে তারা আমাদের পক্ষ হয়ে ‘বাস মালিক সমিতি’র কাছে দেন দরবার করে মাদ্রাসার জন্য মৃত ব্যক্তির নামে কিছু ক্ষতিপূরণ আদায় করবে। আর যেহেতু এই টাকা মাদ্রাসায় যাবে তাই মৃত ব্যক্তি কেয়ামত পর্যন্ত ‘ছোয়াব” পেতে থাকবে। কিন্তু ঘরপোড়া গরু আমরা আর কোন ঝামেলায় যেতে না চাওয়ায় তা প্রত্যাক্ষান করলাম।
শোকাতুর মৃতের পরিবারের কোমল মনোভাবের সুযোগে গ্রামীণ সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তি বা গোষ্ঠি মৃতের পরিবারকে একধরণের শোষন করে থকে। এরমধ্যে একটি গোষ্ঠি আছে যারা ধর্মীয় রীতিনীতির বাতাবরণে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের নামে টাকা-পয়সা পাওয়া বা ভোজন পাওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকে। মৃতের পরিবার এর মানষিক অবস্থার কারণে কোনরূপ ন্যায়/অন্যায় যৌক্তিক অযৌক্তিক বিচার বিশ্লেষন করার সুযোগ থাকেনা ফলে তারাও সামর্থ অনুযায়ী এদের আবদার রক্ষা করে থাকে। এরা আবার নিজ স্বার্থে মোটামুটি সংঘবদ্ধ । এদের আবদারে সম্মত না হলে আবার সমাজে ‘হাসাহাসি-কানাকানি’ করে থাকে। ফলে কোন কোন ক্ষেত্রে অনিচ্ছা সত্বেও এই সব লৌকিক আচার আচরন পালন করতে হলো।
Source: http://www.somewhereinblog.net/blog/Stream/29523356

