August 23, 2015

ঘুষের আখড়া - ফিটনেস ফ্যাক্টরি

নেই রুট পারমিট। নেই ফিটনেসও। অবাধে চলছে লক্কড়-ঝক্কর যানবাহন। সেই সঙ্গে লাইসেন্স ছাড়াই চলছে লেগুনা-অটোরিকশা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই চলছে এসব গাড়ি। যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ। সৃষ্টি হচ্ছে লাগামহীন যানজট। এসব গাড়ি চলাচল রোধ করতে কখনও কখনও অভিযান হয়। মূলত অভিযানের নামে করা হয় আইওয়াশ। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে নিয়ম ভাঙার দায়ে যানবাহন আটক করে মামলা দিয়ে ভুয়া রশিদের মাধ্যমে আদায় করা হয় জরিমানার টাকা। এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমার বদলে চলে যায় অসাধু কর্মকর্তাদের পকেটে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ট্রাফিক পুলিশের দাবি মতো চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই মামলা দিয়ে দেন অনেকে। এমনকি এই মামলার জরিমানা দিতে গিয়েও হয়রানির শিকার হন তারা। দালাল ও সরকারি কর্মকর্তাদের খপ্পরে পড়ে গুনতে হয় বাড়তি টাকা। অনুসন্ধানে বের হয়েছে চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু তথ্য।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ফিটনেস গাড়ির সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। রাজধানীতে গত জুলাই পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করা প্রায় ৯ লাখ গাড়ির মধ্যে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫১টি গাড়িই ফিটনেসবিহীন। সূত্রমতে, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ১১৯২টি বাসের নিবন্ধন করা হয়। তার আগে ২০১৪ সালে ১৩৬৪টি, ২০১৩ সালে ৯৭১টি, ২০১২ সালে ১২১৮টি, ২০১১ সালে ১৫০১টি, ২০১০ সালে ১২৩১টি বাসের নিবন্ধন করা হয়। রাজধানীতে ৯২টি কোম্পানির বাস-মিনিবাস মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার বাস চলাচল করে। এসব বাসের মধ্যে বেশির ভাগই সড়কে চলাচল করে সুযোগ বুঝে। অভিযান চলাকালে বাসগুলো সড়কে নামান না মালিকপক্ষ।

অবাক করার মতো হলেও সত্য ফিটনেস না থাকলেও ফিটনেসের সনদ আছে অনেক গাড়ির। এসব সনদ নিতেও তেমন ঝামেলা পোহাতে হয় না। এমনকি চালকের সনদও মিলে খুব সহজে। বিআরটিএ কার্যালয় পরিদর্শন করে দেখা গেছে, দালালদের উপদ্রব সেখানে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অযোগ্য ব্যক্তিকে চালক হিসেবে সনদ দেয়া থেকে শুরু করে সবকিছুই মিলে বিআরটিএ’র কার্যালয়ে। এসব কাজ করে দেয়ার জন্য এখানে রয়েছে শতাধিক দালাল। গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ সকল কাজই করে দেন তারা। তবে এজন্য দিতে হয় উৎকোচ। উৎকোচের বিনিময়ে দালালদের মাধ্যমে ফিটনেসের কাগজ মিলছে সহজে। একটি গাড়ির ফিটনেস সনদ নিশ্চিত করতে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা নেন দালালরা। ব্যাংকে ৭৫০ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা ভাগ হয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও দালালের মধ্যে। ৭-৮ হাজার টাকার বিনিময়ে মিলে ড্রাইভিং লাইসেন্স। শাকিল নামে এক দালাল জানান, পরীক্ষা দেয়া ছাড়াই ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে পারেন তিনি। তবে পরীক্ষার দিন উপস্থিত থাকতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের মোহাম্মদপুর (পশ্চিম) কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে একই চিত্র। মামলার জরিমানা দিতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হয় সাধারণ মানুষকে। কিন্তু সেখানে কর্মরত এসআই মাসুদ ও এসআই তাজ চক্রের দালালদের উৎকোচ দিলেই সহজে সমাধান হয় সকল কর্ম। গত ২৭শে জুলাই মামলার জরিমানা জমা দিতে গিয়ে হয়রানির শিকার এক চালক জানান, ২৬শে জুলাই মোহাম্মদপুর এলাকায় সার্জেন্ট মোতালেব একটি গাড়িকে রেকার লাগিয়ে তুলে নেয়। পরে মামলা দেন। মামলার পর তিনি বলে দেন ট্রাফিক কার্যালয়ে গিয়ে এসআই মাসুদ বা তাজের সঙ্গে দেখা করিস। পরদিন জরিমানা দিতে গিয়ে প্রথমে লাইনে দাঁড়ান তিনি। পরে এসআই তাজের সঙ্গে দেখা করে সহজেই জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন। পরে ৯শ’ টাকার স্ট্যাম্প কেনা ও রেকারের বিল বাবদ আরও টাকা দাবি করেন ওই দুই এস আই। তাদের সঙ্গে রয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানের দালাল হিসেবে পরিচিত মোশাররফ। সঙ্গে টাকা না থাকলে বিকালে উৎকোচ আদায় করে এই চক্র। ২৭শে জুলাই এই চক্রের দেয়া ০১৯১৩২২১৪২৬, ০১৯১৮১১২৭৭ ও ০১৭১৮৬৮৪৬৩৬ নম্বরে ওই চালক ০১৯৩৫৪৬৮০৯৭ থেকে বিকাশে টাকা দিয়ে তবেই রেহাই পান।
জরিমানা জমা দিতে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি প্রয়োজন হয়। তাৎক্ষণিকভাবে অনেকের কাছেই তা থাকে না। এই সুযোগ নেন মোশাররফ। ২শ’ থেকে ২৫০ টাকায় পরিচয়পত্রের ফটোকপি বিক্রি করে বিল জমা দেন তিনি। এই কাজটি বাইরের অন্য কেউ করতে পারেন না স্থানীয় সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের কারণে। বিআরটিএ’র এই অনিয়ম সম্পর্কে উপ-পরিচালক প্রকৌশলী এসকে মাহবুব-ই-রাব্বানী বলেন, বিআরটিএ-কে দালালমুক্ত রাখতে আমরা সচেষ্ট। এখানে কেউ অনিয়ম করলে ছাড় দেয়া হবে না। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সনদ নিয়ে এবং সনদ ছাড়া উভয় পদ্ধতিতেই চলছে যানবাহন। আবদুল কাদের নামক চালক জানান, ফিটনেস নেই বলে প্রায়ই গাড়ি আটক করে ট্রাফিক পুলিশ। টাকা দিলেই আবার ছেড়ে দেয় এভাবেই গাড়ি চালাচ্ছেন তিনি। গাবতলী-যাত্রাবাড়ী রুটের একটি বাসের চালক হাবিব জানান, গাড়ির ফিটনেস নেই অনেক আগ থেকেই। সড়কে চলাচলের বিষয়টি কোম্পানির ব্যাপার। তারাই ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করেন। সূত্রমতে, ট্রাফিক পুলিশের অসাধু কর্মকর্তাদের পরিবহন মালিকপক্ষ উৎকোচের বিনিময়ে ম্যানেজ করে। তবে অভিযান শুরু হলে এসব গাড়ির দেখা মেলে না রুটে। রাত ১০টার আগে রাজধানীতে ট্রাক প্রবেশে নিষেধ থাকলেও দিনদুপুরেই ট্রাক ঢুকতে দেখা যায়।

একইভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই বিভিন্ন সড়কে অটোরিকশা-লেগুনা চালাচ্ছেন অনেকে। যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, গুলিস্থানে কথা হয় লেগুনা চালকদের সঙ্গে। তাদের অনেকেরই লাইসেন্স নেই। রাজ্জাক নামে এক লেগুনা চালক জানান, লাইন্সেন পাওয়া কঠিন। তার চেয়ে ট্রাফিক পুলিশ ম্যানেজ করেই চলছেন তিনি। এজন্য প্রতিদিনই ২৫০ টাকা লাইন ফি দিতে হয় তাকে।

শনিবার বিকাল ৫টায় খিলক্ষেত এলাকায় এক সিএনজি অটোরিকশা আটক করেন ওই এলাকার ট্রাফিক সার্জেন্ট সুকান্ত। চালক লাল মিয়ার অভিযোগ, যত্রতত্র পার্কিংয়ের অভিযোগে তার কাছে ১ হাজার টাকা দাবি করেন সুকান্ত। টাকা দিতে রাজি না হলে রেকারের ভয় দেখান তিনি। শেষ পর্যন্ত লাল মিয়ার অটোরিকশার নামে একটি মামলা দেন সুকান্ত। অনেকক্ষেত্রেই উৎকোচ গ্রহণ করে আইন অমান্য করা চালকদের মামলা থেকে রেহাই দেন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারা।

ঢাকা মেট্রোপলিটনের ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে অভিযান চলছে। এসব গাড়ি দুর্ঘটনা ও যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীতে ট্রাক প্রবেশ সম্পর্কে তিনি জানান, রাত ১০টার আগে বাইরে থেকে রাজধানীতে ট্রাক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে। এসব ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশের কেউ অনিয়ম করলে সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পুর্বে প্রকাশিতঃ mzamin.com/details.php?mzamin=ODg3ODg=&s=Mw==

August 22, 2015

বিদেশে যাচ্ছেন, মিষ্টি খাওয়াবেন না?

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের সিভিল এভিয়েশন কর্মকর্তাদের মিষ্টি খাওয়াতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন বর্হিগমন যাত্রীরা। তবে সরাসরি মিষ্টি নয় ৫’শ কিংবা এক হাজার টাকা দিলেই মিষ্টি খাওয়ার চাহিদা পুরণ হয় সিভিল এভিয়েশন কর্মকর্তাদের। এভাবে সকল যাত্রীর কাছ থেকেই মিষ্টি খাওয়ার আবদার করে থাকেন তারা।

যাত্রীর মালামাল চেক করার সময় এভিয়েশন কর্তারা লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে যাত্রীদের কাছে মিষ্টি খাওয়ার জন্য টাকা চাইতে থাকেন। টাকা না দিতে পারলে দেশের বাহিরে যাবেন অথচ আমাদেরকে মিষ্টি খাওয়ানোর কথা মনে থাকেনা বলে মৃদু ভৎসনা করেন।

এছাড়া, কারও পকেটে বাংলাদেশী টাকা থাকলে বিদেশে বাংলাদেশী টাকা দিয়ে কি করবেন বলে টাকাগুলো কেড়ে নেন কর্মকর্তারা।


মুন্সিগঞ্জ থেকে আসা বিমানযাত্রী সেলিম পাঠান ৭ দিনের জন্য মালয়েশিয়া বেড়াতে যাবেন। ইমিগ্রেশন পার করে সিভিল এভিয়েশন কর্মকর্তার সামনে গেলে তার মানিব্যাগ চেক করে চারশ টাকা পান। বিদেশে বাংলাদেশী টাকা নেয়া নিষিদ্ধ জানিয়ে টাকাগুলো রেখে দেন তারা। কিন্তু এ টাকা কোথায় যাবে জানতে চাইলে কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।


এ প্রতিবেদক নিজেও এভিয়েশন কর্মকর্তাদের এমন আচরনের সম্মুখিন হন। মানিব্যাগে প্রায় ১৭’শ টাকা পাওয়া গেলে সে টাকা রেখে দিতে চান। নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তখন কর্মকর্তারা বলেন, ‘ভাল কথা, বিদেশে যাচ্ছেন তো আমাদেরকে মিষ্টি খাওয়াবেন না? এ প্রতিবেদক ২’শ টাকা বের করে দিতে চাইলে এক নারী কর্মকর্তা রাগত স্বরে বলেন, ‘লাগবে না আপনার টাকা, এ দিয়ে কি মিষ্টি খাওয়া যাবে? আপনি নিজেই খান।


মুন্সিগঞ্জ থেকে মালয়েশিয়া ভ্রমণের জন্য ইমিগ্রেশন পার করে এভিয়েশন কর্মকর্তার সামনে আসেন আব্দুর রশিদ নামে একজন ব্যবসায়ী। প্রবাসে থাকা আত্মীয়-স্বজনের জন্য তিনি দুই প্যাকেটে ৪ কেজি মিষ্টি হাতে করে নিয়ে আসেন। এভিয়েশন কর্তারা তার কাছেও মিষ্টি খাওয়ার টাকা চেয়ে  বলেন, মিষ্টি বিদেশে নিয়েই যাবেন, আমাদেরকে খাওয়াবেন না? তিনি প্যাকেট  খুলে মিষ্টি খেতে দিতে চান। তখন কর্মকর্তারা বলেন, আপনি টাকা দিয়ে যান আমরা পরে খেয়ে নেব।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বিমানযাত্রী বলেন, সিভিল এভিয়েশন কর্মকর্তারা মিষ্টি খাওয়ার কথা বলে এক প্রকার চাঁদাবাজি করছেন। অনেক সময় টাকা না দিলে ব্যাগ রেখে দেয়াসহ ফ্লাইট ক্যানসেল করে দেয়ার হুমকি দেন।


ইউনিভার্সিটি মালয়ার আইন গবেষক মিনহাজ উদ্দিন মিরান বলেন, প্রবাসে যাওয়ার প্রথম পদক্ষেপেই বিমান বন্দরে আমরা এমন হয়রানির শিকার হই তাহলে দেশের প্রতি টানের জায়গাটা হালকা হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় হলেও সরকার এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এতে নিজ দেশের জনগণের কাছেই ইমেজ সংকটে পড়ে সরকার। 


পুর্বে প্রকাশিতঃ mzamin.com/details.php?mzamin=ODg5NzY=

July 2, 2015

Eid festival; Bribe festival

ঈদ কারো জন্য ঘুষের উৎসব !



ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাতুয়াইল মা ও শিশু হাসপাতাল সংলগ্ন ফুট ওভারব্রিজ। রোববার বিকাল ৩টা। ঢাকা মেট্রো ন ১৮-৪৩৯৪ নম্বর মি
নি ট্রাকটি থামালেন ট্রাফিক কনস্টেবল মাজহার। চালক বাবুকে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামান এসআই আবদুল জলিল ও মাজহার। ছোঁ মেরে পকেট থেকে নিয়ে নেন ড্রাইভিং লাইসেন্স। চালক দেরি না করে আবদুল জলিলের পায়ে পড়েন। আকুতি জানান লাইসেন্স ফেরত দেয়ার। কিন্তু দুই পুলিশ নাছোড়বান্দা। লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে আবদুল জলিল বসেন ওভারব্রিজের নিচে রাখা মোটরসাইকেলের ওপর। মাজহার চলে গেছেন অন্য গাড়ি আটকাতে। বাবু ও তার হেলপারের সঙ্গে দীর্ঘ সময় চলে দফারফার চেষ্টা। অনেক হাতে-পায়ে ধরে ৫০০ টাকা দিয়ে ছাড়া পান বাবু। এভাবে ট্রাক, মিনি ট্রাক, রিকশা ভ্যান, সিএনজি অটোরিকশায় চাঁদাবাজি করতে দেখা গেছে এসআই আবদুল জলিল ও কনস্টেবল মাজহারকে।
শুধু এ স্থানই নয়, সারা দেশেই চলছে এ দৌরাত্ম্য। মহাসড়কে বিভিন্ন রুটে যাতায়াতকারী বাস-ট্রাকের মালিক ও শ্রমিকরা জানান, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনার পরও সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না। চাঁদাবাজি বন্ধে রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বসানো হয়েছে সিসিটিভি। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। কিন্তু সব এড়িয়ে অসাধু পুলিশ ও স্থানীয় মাস্তানরা চাঁদাবাজি করছেই। তারা শুধু টাকা আদায়ের কৌশল পরিবর্তন করেছে। আগে যেখানে সেখানে রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে চাঁদা নিত। এখন সেটা কিছু কমেছে। তবে বেড়েছে মাসোয়ারা আদায়। ঈদ সামনে রেখে তা বাড়বে আরও। মৌসুমি চাঁদাবাজদের প্রধান টার্গেট এখন পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও যাত্রীবাহী বাস। মালিক ও চালকরা আরও জানান, এবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের তুলনায় ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-বেনাপোল ও ঢাকা-রাজশাহী-সোনামসজিদ রুটে চাঁদাবাজির হার বেশি।
ঢাকা মহানগর পণ্য পরিবহন এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দোলন কান্তি বড়ুয়া যুগান্তরকে জানান, সড়ক-মহাসড়কে পুলিশ ও রাজনৈতিক দল আশ্রিত মাস্তানদের বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে পরিবহন ব্যবসা করাটাই দায় হয়ে পড়েছে। রাজধানীর প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী, কাঁচপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ, সাইনবোর্ড, বাবুবাজার ব্রিজ, কেরানীগঞ্জের কদমতলী, মিরপুর বেড়িবাঁধ, পর্বতা সিনেমা হল এলাকা, আশুলিয়ার ধউর ব্রিজ, পোস্তগোলা ব্রিজ, সদরঘাট, গাবতলী, আমিন বাজার, আবদুল্লাপুর ব্রিজ এলাকায় চেকপোস্ট ও তল্লাশির নামে চলে বেপরোয়া চাঁদাবাজি।
দোলন কান্তি আরও বলেন, দেশের ৬৪ জেলা ও বিভাগীয় শহরসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরে পণ্য পাঠান তারা। অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজির কারণে তাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
ফলে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন এজেন্সি মালিক সমিতি এবং ঢাকা মহানগর পণ্য পরিবহন এজেন্সি মালিক সমিতির চাঁদাবাজির বন্ধের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেন। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার সেটা তুলে নেন।
বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি হাজী নূরুল বাহার যুগান্তরকে জানান, রাস্তায় হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজির পরিমাণ অনেকটা কমেছে। তবে বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মাস্তানদের চাঁদাবাজির পরিমাণ বেড়েছে। বড় মহাসড়কের তুলনায় আঞ্চলিক সড়ক, মহাসড়কগুলোতে এ চাঁদাবাজির পরিমাণ বেশি। ঢাকা থেকে একটি গাড়ি চট্টগ্রাম গেলে প্রায় আড়াইশ’ টাকা চাঁদা দিতে হয়।
তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে দেশের বিভিন্ন রুট থেকে আসা ট্রাকচালকদের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, এখন সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি হয় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া পদ্মার উভয় পাড়ে এবং মাওয়া-কাওড়াকান্দিতে পদ্মার উভয় পারে। পাটুরিয়ায় ফেরি পারাপারের গাড়িপ্রতি ৯৫০ টাকা নির্ধারিত টোলের স্থলে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সেখানে আদায় করা হয় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। মাওয়া ঘাটেও একই অবস্থা। মাওয়া ও কাওড়াকান্দিতে ফেরির নির্ধারিত ফির চেয়ে তিনগুণ বেশি টাকা দিতে হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসার্ট থেকে আম নিয়ে কারওয়ান বাজারে আসা ট্রাকচালক আমিনুল বিশ্বাস জানান, আশুলিয়ার ধউর, বাইপাইল, মাওনা, মির্জাপুর, এলেঙ্গা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহীসহ ১০ পয়েন্টে ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে চাঁদাবাবদ তাকে ৮০০ টাকা গুনতে হয়েছে। এছাড়া সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ওঠার আগে ট্রাকের ওজন দেয়ার জন্য ৩০০ টাকা দিতে হয়েছে।
বাংলাদেশ ট্রাকচালক সমিতির সভাপতি হুমায়ুন কবির জানান, প্রতি ট্রিপে চাঁদাবাবদ ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ৬০০ থেকে ৬৫০, ঢাকা-রাজশাহী-সোনামসজিদ রুটে ৬০০ থেকে ৭০০, ঢাকা-বেনাপোল রুটে ৫০০ থেকে ৬০০, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে আড়াইশ’ থেকে ৩০০ টাকা এবং ঢাকা সিলেট রুটে প্রায় ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। স্থানীয় মাস্তানরা বিভিন্ন সমিতি, যানজট ক্লিয়ার করাসহ বিভিন্ন অজুহাতে এসব চাঁদা আদায় করে। রাস্তায় গাড়ি চালাতে হলে হামলা-মারধরের ভয়ে ট্রাকচালকরা এসব টাকা দিতে বাধ্য হন।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ঢাকা-সিলেট রুটের মিতালী পরিবহনের ঢাকা মেট্রো ব ১৪-৭৬৬৬ বাসের চালকের সহকারী জানান, প্রতি ট্রিপে ১৬০০ টাকা জিপি (চাঁদা) দিতে হয়। এর মধ্যে সিলেটের শায়েস্তাগঞ্জে ৪০, হবিগঞ্জে ৪০, ভৈরবে ৭০ টাকা, গাউসিয়ায় ২০ টাকা করে দিতে হয়। বাদবাকি টাকা দিতে হয় সায়েদাবাদ টার্মিনাল ও সিলেট টার্মিনালে।
কাঁচপুরের শিমরাইল মোড়ে পাথর বোঝাই ঢাকা মেট্রো ট ১৮-৫৬৪৭ নম্বর ট্রাকের চালক মহসিন জানান, কাঁচপুর থেকে ঢাকা শহরের ভেতর পাথর নিয়ে গেলে ৪ থেকে ৫ বার আটকানো হয়। প্রতিবার ২০০ টাকা করে দিতে হয়। কোনো সময় টাকা নেয়ার পরও পুলিশ মামলা করে। ঢাকা-চাঁদপুর রুটের পদ্মা এক্সপ্রেস গাড়ির চালক রফিকুল ইসলাম জানান, যাত্রাবাড়ী, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল, কুমিল্লার পদুয়ারবাজার বিশ্বরোডসহ ৮ পয়েন্টে প্রতি ট্রিপে ৩০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। ঈদের আগে এ চাঁদার পরিমাণ আরও অনেক বাড়বে।
সায়েদাবাদে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর রুটের যাত্রীসেবা পরিবহনের বাস চালকের সহকারী নয়ন মিয়া জানান, বড় বাসগুলোর তুলনায় লোকাল বাস ও পণ্যবাহী ট্রাকই চাঁদাবাজদের প্রধান টার্গেট। কারণে-অকারণে ছোট বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা নেয়া হয়।
ঢাকা-কুমিল্লা রুটের কর্ডোভা পরিবহনের বাসচালক রফিকুল ইসলাম জানান, মেঘনা ব্রিজ, কাঁচপুর, চিটাগাং রোড (শিমরাইল) শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় এখন সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো আছে। তাই পুলিশ রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে টাকা নেয় না। গাড়িতে উঠে কাগজ নিয়ে নেয়। পরে হেলপারকে পাঠিয়ে টাকা দিয়ে কাগজ নিয়ে আসতে হয়।
সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাইওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি মল্লিক ফখরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশসহ প্রতিটি ইউনিটকে বলে দেয়া হয়েছে আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে। কারও বিরুদ্ধে কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ড বা চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্তসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও জানান, হাইওয়ে পুলিশের কয়েক সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়ায় এরই মধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়াও চাঁদাবাজি মনিটরিংয়ে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিসিটিভির মাধ্যমে মনিটরিং করা হচ্ছে। গোয়েন্দা নজরদারিও চলছে। খোদ আইজিপি এসব বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন। 
Courtesy: http://www.jugantor.com/last-page/2015/07/01/287045