April 21, 2016

ডুমুরিয়ার ভূমি কর্মকর্তাকে জুতাপেটা

খুলনার ডুমুরিয়া ৩নং রুদাঘরা ইউনিয়নের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা রমজান আলীকে জুতাপেটা করেছে জনতা। 



খুলনার ডুমুরিয়া ৩নং রুদাঘরা ইউনিয়নের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা রমজান আলীকে জুতাপেটা করেছে জনতা। মঙ্গলবার দুপুরে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দাখিলা কাটাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। খরসংঘ গ্রামের আবু সুফিয়ান দাখিলা কাটতে রুদাঘরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যান। এ সময়ে ভূমি কর্মকর্তা ১৪ শতক বাস্ত ও ৯১ শতক বাগান বাড়ির জন্য ৪৩ বছরের বকেয়া খাজনা বাবদ ১৪ হাজার টাকা আদায় করেন সুফিয়ানের কাছ থেকে। অথচ দাখিলায় মাত্র ৯ হাজার ৭১৪ টাকা লেখা হয়। এ নিয়ে সুফিয়ানের সঙ্গে ভূমিকর্তার তর্কাতর্কি হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় ২/৩শ’ লোক জড়ো হয় ভূমি কার্যালয় চত্বরে। এলাকাবাসী জানায়, রমজান আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি দাখিলা কাটতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিতেন। এ অবস্থায় গতকালের ঘটনায় ক্ষুব্ধ লোকজন রমজান আলীর ওপর হামলা চালান। জুতাপেটা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ঘটনাস্থলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল হাসান পরিদর্শন করেন। 

Courtesy: http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=10818

January 3, 2016

ঘুষের বাজারদর

ঘুষের বাজারদর

ঘুষকে ‘ঘুষ’ বললে ঘুষখোরদের সম্মানে ঘা লাগে। তাই ‘সালামি’, ‘সম্মানী’, ‘বকশিশ’, ‘সার্ভিস চার্জ’, ‘নজরানা’, ‘চা-পানির খরচ’, ‘স্পিড মানি’, ‘পারসেন্টেজ’, ‘গিভ অ্যান্ড টেক’, ‘কমিশন’ ইত্যাদি নানা ‘সম্মানজনক নাম বা শব্দে’ চলছে ঘুষের অবৈধ লেনদেন। 


শুধু তা-ই নয়। ইতিপূর্বে বাঁ-হাতে বা ড্রয়ার খুলে দিয়ে স্পর্শ না করে ঘুষ গ্রহণের রেওয়াজ ছিল। এখন সেই রাখঢাক বজায় রাখা বা গোপনীয়তার তোয়াক্কা না করে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে প্রকাশ্যেই চলছে রমরমা ঘুষ বাণিজ্য। তবে অফিস-আদালতে সিসি ক্যামেরা বাড়ায় বাসা-বাড়ি ও বাইরেই ঘুষের লেনদেন বাড়ছে। এতেই শেষ নয়। কোন কাজের জন্য ঘুষের হার কত সেই বাজারদরও এখন জনে জনে জানা। তাই ঘুষ ছাড়া কাজ করার পরিবর্তে উল্টো ঘুষের প্রচলিত বাজারদরের চেয়ে কম খরচে কাজ আদায়ের চেষ্টা-তদবিরেই বাধ্য হচ্ছেন অসহায় গ্রাহকরা। তবু ঘুষের তেমন অভিযোগই পাচ্ছে না দুর্নীতি দমন কমিশন। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ফাঁদ পেতে ঘুষখোরদের ধরার অভিযানও নেই।

গত ১৭ই নভেম্বর সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদপ্তরে প্রকাশ্য ঘুষ লেনদেনের নানা দৃশ্য চোখে পড়ে। এতেই ক্ষান্ত ছিলেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ঘুষের সঙ্গে বিনা রশিদে টাকা নিয়ে গ্রাহকদের ভূমির ম্যাপ ও খতিয়ান বা পর্চার ছায়াকপি সরবরাহ করে সরকারি ফি’র পুরোটাই মেরে দিচ্ছেন। সরজমিন দেখা যায়, ওইদিন গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থেকে আসেন আবদুস সামাদ। অন্য প্রায় অর্ধশত গ্রাহকের সঙ্গে তিনি ওই অধিদপ্তরের প্রথম ও প্রধান করিডোর সংলগ্ন ‘গ্রহণ ও প্রেরণ বা আদান-প্রদান শাখায়’ অপেক্ষা করছিলেন। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, একটি ম্যাপের ছায়াকপির জন্য এর আগে কয়েকবার এসেছি। পাইনি। আজ এসে বাধ্য হয়ে সামনে বসে থাকা ওই ব্যক্তিকে (আঙুল দিয়ে কাউন্টারে বসা মামুনুর রহমানকে দেখিয়ে) ৫২০ টাকার কাজের জন্য ৭০০ টাকা দিয়েছি। আজ বিকালের মধ্যে দেয়া হবে জানিয়ে তিনি অপেক্ষা করতে বলেছেন। এজন্য কোন রশিদও দেয়া হয়নি। একই ভাবে নির্ধারিত ৫২০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে অধিকাংশ গ্রাহককেই টাকা গ্রহণের রশিদ দেয়া হয়নি। অথচ ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদে টাকা আদায়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এর পরপর তার সামনেই নিজেকে গ্রাহক পরিচয় দিয়ে এই প্রতিবেদক কথা বলেন মামুনুর রহমানের সঙ্গে। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আগামী রোববার সরকারি ফি অনুযায়ী ৫২০ টাকা করে যত কপি প্রয়োজন ম্যাপ ও খতিয়ান বা পর্চার কপি দেয়া যাবে। রশিদ দেয়া হবে না। যেহেতু টাকা গ্রহণের রশিদ দেয়া হবে না, সেহেতু টাকা কিছুটা কম নেন- এমন অনুরোধেও কম নিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। কথার একপর্যায়ে নিজের পরিচয় দেয়ার পর তৎক্ষণাৎই ঘুষ গ্রহণ ও বিনা রশিদে টাকা নেয়ার কথা বেমালুম অস্বীকার করে বসেন মামুনুর রহমান। একইভাবে অস্বীকার করেন রশিদ প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহিলা কর্মচারীসহ আরও দু’জন। একইভাবে আরও অন্তত কয়েক ডজন গ্রাহককে বিনা রশিদে টাকা নিয়ে ম্যাপ ও পর্চার কপি সরবরাহ করতে দেখা গেছে।

রশিদ দেয়ার দায়িত্বে থাকা এক মহিলা কর্মী ও মামুনুর রশিদের কাছে জানতে চাইলে বলেন, প্রতিদিন এভাবে দেড় শতাধিক গ্রাহকের সমাগম হয়। এসব গ্রাহকের অধিকাংশেরই আরএস, বিএস, সিটি ম্যাপ এবং পর্চাসহ একাধিক কপির প্রয়োজন হয়। কিন্তু ওইদিন আবেদন গ্রহণের নির্ধারিত সময় শেষে বিকাল সাড়ে ৩টায় মাত্র ৩২ জনকে রশিদ প্রদান করতে দেখা গেছে। আবেদনের সর্বশেষ ক্রমিক ছিল ৩৭২০ নম্বর।

গাড়ি থেকে নেমে এক কর্মকর্তা অধিদপ্তরে প্রবেশের সময় এক নারী গ্রাহক রশিদ ছাড়া টাকা গ্রহণের অভিযোগ করেন। দেখিয়ে দেয়ার জন্য ওই কর্মকর্তাকে সে কক্ষে নিয়ে যেতে চাইলে কর্মকর্তা যেতে উদ্যত হন। পরক্ষণেই উল্টো ফিরে ভেতরে ঢুকে যান ওই কর্মকর্তা। মহিলা তার পিছু নিলে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি গেইটে থাকা খাকি পোশাক পরা অপর কর্মচারী। পরে ভেতরে গিয়েও ওই কর্মকর্তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের ১৯ জোনের মধ্যে প্রতিদিন ঢাকা জোনের ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলার মানুষ ওই অধিদপ্তরে এমন বাজারদরে প্রকাশ্য ঘুষ বাণিজ্যের শিকার হচ্ছেন। 

একইভাবে ভূমি সংক্রান্ত অন্যান্য সেবা গ্রহণেও চলছে ঘুষের বাহার। জমির নামজারির-ফি আড়াইশ’ টাকার সঙ্গে আর মাত্র ২০ টাকা কোর্ট-ফি যুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও তেজগাঁও ভূমি অফিসের একাধিক কর্মকর্তা এই সেবা দেয়ার জন্য ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। একইভাবে রেজিস্ট্রি-ফি দাবি করে প্রতি লাখ টাকা মূল্যের বিপরীতে ১৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা করে। তবে তারা নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আরও কিছুটা কমে কাজ করে দেয়ার সম্মতি জানায়।
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. আবদুুল জলিল দৈনিক মানবজমিনকে বলেন, এই কার্যালয়ে ঘুষ লেনদেন বন্ধ করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে সমূলে উৎপাটন করতে পারিনি। তা কঠিনও বটে। পদ্ধতিগত পরিবর্তন ও অনলাইনে সেবা সরবরাহের মাধ্যমে দুর্নীতি ও গ্রাহকের হয়রানি কমানো সম্ভব। আমরা সেই সক্ষমতার দিকে এগুচ্ছি। তবে ঘুষের সঙ্গে বিনা রশিদে ম্যাপ ও পর্চা সরবরাহ করে সরকারি টাকাটাও মেরে দেয়ার বিষয়টি এই প্রথম জানলাম। আপনি ওই কক্ষে বসে থাকা অবস্থায় জানালে হাতে-নাতে ধরা যেত। তবে কর্মচারীর পরিচয় দিয়ে টাউটরা তা করতে পারে।

শুধু ভূমি খাতে নয়। অন্যান্য খাতে ও অফিস-আদালতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রমরমা ঘুষ বাণিজ্য এবং ঘুষের প্রকাশ্য ও প্রচলিত বাজারদর সম্পর্কে। ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে ব্যবসায় লাইসেন্স নিতে অতিরিক্ত ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। থানায় বিনামূল্যে সাধারণ ডায়েরি করার সেবা নিতে দিতে হচ্ছে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা। ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন করতে ৩ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা, আমদানি সনদের ২০ হাজার থেকে এক লাখ, রপ্তানি সনদের ঘুষের বাজারদরও প্রায় একই, বিনিয়োগ বোর্ডের অনুমোদনের জন্য অতিরিক্ত গচ্চা দিতে হয় ৫ হাজার ২০ হাজার টাকা। রাজধানীর অগ্রসর কোন স্কুলে ভর্তির জন্য লাগে ৩০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। কারাগারে স্বজনদের দেখতে লাগে ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা। তা দেয়া না হলেও ওই বন্দির অবস্থানের কারা ওয়ার্ড নম্বর জানা থাকলেও তাকে খুঁজেই পাওয়া যায় না। এছাড়া নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমতির জন্য ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ, সরকারি চাকরির ৪০ হাজার থেকে ১০ লাখ, পুলিশের চাকরি ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ, পুলিশ ভেরিফিকেশন সনদ পেতে ৫০০ থেকে দেড় হাজার, পুলিশের বদলি ৫০ হাজার থেকে ৩০ লাখ, পুলিশ দিয়ে নির্যাতন করাতে ৫০০ থেকে ৫০ হাজার, বাড়ির প্ল্যান পাস করাতে ৩০ হাজার থেকে ৬ লাখ, সরকারি হাসপাতালে ভর্তি ১০০ থেকে ২ হাজার, ফৌজদারি মামলার মেডিকেল সনদ ৫ হাজার ৪০ হাজার টাকা। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা। রেলওয়ের বিভিন্ন কর্মচারী পদে চাকরির জন্য লাগে ২ থেকে ৬ লাখ টাকা। কয়েক বছর আগে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধার ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্যের চেয়ে এখন বেড়েছে রেলওয়ের চাকরি প্রদানের ঘুষের বাজারদর। পাসপোর্ট করাতে অতিরিক্ত গুণতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। ১০ থেকে ২০ হাজার টাকায় মিলে অবৈধ পাসপোর্ট। কয়েকবার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ১ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় না হওয়া পর্যন্ত মেডিকেল সনদ মিলছে না বিদেশ গমনেচ্ছুদের অর্ধেকের বেশি মানুষের। ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে অতিরিক্ত গুণতে হচ্ছে ২ থেকে ৬ হাজার টাকা। চট্টগ্রামসহ বন্দরগুলোতে আমদানিকৃত পণ্য খালাসে লাগে ১৫ থেকে ২০ হাজার, হাউজ লোন পেতে হাতডালি দিতে হচ্ছে ১ থেকে ৫ লাখ টাকা। সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে চাকরির জন্য ঘুষ দিতে হচ্ছে ২ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান বলেন, কোন ব্যাংক যদি চাকরি প্রার্থীদের আবেদনের ক্ষেত্রে ফি হিসেবে টাকা-পয়সা নেয়, তাহলে সেই ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি কোন ব্যাংক এখনও টাকা নিয়ে থাকে তাহলে নামসহ অভিযোগ করলে জড়িত ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস-আদালতে নিয়োগ ও গ্রাহক সেবার বিপরীতে ঘুষের নানা অংকের বাজারদর প্রচলিত রয়েছে। বিভিন্ন অফিসে গিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই এ রকম প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেনের বহু দৃশ্য চোখে পড়ে। চোখ-কান খোলা রেখে ঘণ্টাখানেকের অপেক্ষায় চোখে পড়তে পারে যে কারও। তবু ঘুষখোরদের হাতেনাতে ধরার জন্য তেমন ফাঁদ পাতছে না দুর্নীতি দমন কমিশন। ঘুষের তেমন অভিযোগও পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় রাজধানী ঢাকায় হলেও চলতি বছর রাজধানী ও ঢাকা জেলায় ফাঁদ পেতে হাতেনাতে ঘুষ লেনদেনের সময় কোনো ঘুষখোরকেই ধরা হয়নি। সারা দেশে রমরমা ঘুষ বাণিজ্য চললেও পুরো দেশেই এ বছর ফাঁদ পেতে ধরা ঘুষ লেনদেনের সংখ্যা আধাডজনের বেশি মাত্র। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৩টি, নওগাঁ, বাগেরহাট ও চুয়াডাঙ্গায় ১টি করেসহ আরও বেশ কয়েকটি ফাঁদ পেতে ঘুষের লেনদেন হাতেনাতে ধরেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের আঞ্চলিক অফিসের কর্মকর্তারা। যা রমরমা ঘুষ বাণিজ্যের ব্যাপক উপস্থিতির তুলনায় একেবারে নগণ্য বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

দুর্নীতি দমন কমিশন বাংলাদেশের কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, ঘুষ প্রায় ক্ষেত্রেই ধরা যায় না। কেউ ঘুষ খেয়ে ফুলে ফেঁপে উঠলেই তদন্ত করে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিই। ঘুষের নিয়মিত অভিযোগ ও মামলাগুলো তদন্ত করেও ব্যবস্থা নেয়া হয়। এর বাইরে ফাঁদ পেতেও ঘুষখোর ধরা হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান ও দপ্তরে বিভিন্ন সেবা প্রদান বা গ্রহণে ঘুষের প্রকাশ্য বাজারদর চালু হয়ে গেছে, সে ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেয়া হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে ক্ষেত্রে অনেক সময় ফাঁদ পেতে ঘুষখোরকে হাতেনাতে ধরা হচ্ছে। তবে এ বছর ঢাকার বাইরে হাতে-নাতে ঘুষ গ্রহণের সময় কয়েকজনকে ধরা হলেও ঢাকায় কাউকে ধরা যায়নি।

August 23, 2015

ঘুষের আখড়া - ফিটনেস ফ্যাক্টরি

নেই রুট পারমিট। নেই ফিটনেসও। অবাধে চলছে লক্কড়-ঝক্কর যানবাহন। সেই সঙ্গে লাইসেন্স ছাড়াই চলছে লেগুনা-অটোরিকশা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই চলছে এসব গাড়ি। যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ। সৃষ্টি হচ্ছে লাগামহীন যানজট। এসব গাড়ি চলাচল রোধ করতে কখনও কখনও অভিযান হয়। মূলত অভিযানের নামে করা হয় আইওয়াশ। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে নিয়ম ভাঙার দায়ে যানবাহন আটক করে মামলা দিয়ে ভুয়া রশিদের মাধ্যমে আদায় করা হয় জরিমানার টাকা। এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমার বদলে চলে যায় অসাধু কর্মকর্তাদের পকেটে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ট্রাফিক পুলিশের দাবি মতো চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই মামলা দিয়ে দেন অনেকে। এমনকি এই মামলার জরিমানা দিতে গিয়েও হয়রানির শিকার হন তারা। দালাল ও সরকারি কর্মকর্তাদের খপ্পরে পড়ে গুনতে হয় বাড়তি টাকা। অনুসন্ধানে বের হয়েছে চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু তথ্য।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ফিটনেস গাড়ির সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। রাজধানীতে গত জুলাই পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করা প্রায় ৯ লাখ গাড়ির মধ্যে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫১টি গাড়িই ফিটনেসবিহীন। সূত্রমতে, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ১১৯২টি বাসের নিবন্ধন করা হয়। তার আগে ২০১৪ সালে ১৩৬৪টি, ২০১৩ সালে ৯৭১টি, ২০১২ সালে ১২১৮টি, ২০১১ সালে ১৫০১টি, ২০১০ সালে ১২৩১টি বাসের নিবন্ধন করা হয়। রাজধানীতে ৯২টি কোম্পানির বাস-মিনিবাস মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার বাস চলাচল করে। এসব বাসের মধ্যে বেশির ভাগই সড়কে চলাচল করে সুযোগ বুঝে। অভিযান চলাকালে বাসগুলো সড়কে নামান না মালিকপক্ষ।

অবাক করার মতো হলেও সত্য ফিটনেস না থাকলেও ফিটনেসের সনদ আছে অনেক গাড়ির। এসব সনদ নিতেও তেমন ঝামেলা পোহাতে হয় না। এমনকি চালকের সনদও মিলে খুব সহজে। বিআরটিএ কার্যালয় পরিদর্শন করে দেখা গেছে, দালালদের উপদ্রব সেখানে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অযোগ্য ব্যক্তিকে চালক হিসেবে সনদ দেয়া থেকে শুরু করে সবকিছুই মিলে বিআরটিএ’র কার্যালয়ে। এসব কাজ করে দেয়ার জন্য এখানে রয়েছে শতাধিক দালাল। গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ সকল কাজই করে দেন তারা। তবে এজন্য দিতে হয় উৎকোচ। উৎকোচের বিনিময়ে দালালদের মাধ্যমে ফিটনেসের কাগজ মিলছে সহজে। একটি গাড়ির ফিটনেস সনদ নিশ্চিত করতে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা নেন দালালরা। ব্যাংকে ৭৫০ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা ভাগ হয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও দালালের মধ্যে। ৭-৮ হাজার টাকার বিনিময়ে মিলে ড্রাইভিং লাইসেন্স। শাকিল নামে এক দালাল জানান, পরীক্ষা দেয়া ছাড়াই ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে পারেন তিনি। তবে পরীক্ষার দিন উপস্থিত থাকতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের মোহাম্মদপুর (পশ্চিম) কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে একই চিত্র। মামলার জরিমানা দিতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হয় সাধারণ মানুষকে। কিন্তু সেখানে কর্মরত এসআই মাসুদ ও এসআই তাজ চক্রের দালালদের উৎকোচ দিলেই সহজে সমাধান হয় সকল কর্ম। গত ২৭শে জুলাই মামলার জরিমানা জমা দিতে গিয়ে হয়রানির শিকার এক চালক জানান, ২৬শে জুলাই মোহাম্মদপুর এলাকায় সার্জেন্ট মোতালেব একটি গাড়িকে রেকার লাগিয়ে তুলে নেয়। পরে মামলা দেন। মামলার পর তিনি বলে দেন ট্রাফিক কার্যালয়ে গিয়ে এসআই মাসুদ বা তাজের সঙ্গে দেখা করিস। পরদিন জরিমানা দিতে গিয়ে প্রথমে লাইনে দাঁড়ান তিনি। পরে এসআই তাজের সঙ্গে দেখা করে সহজেই জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন। পরে ৯শ’ টাকার স্ট্যাম্প কেনা ও রেকারের বিল বাবদ আরও টাকা দাবি করেন ওই দুই এস আই। তাদের সঙ্গে রয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানের দালাল হিসেবে পরিচিত মোশাররফ। সঙ্গে টাকা না থাকলে বিকালে উৎকোচ আদায় করে এই চক্র। ২৭শে জুলাই এই চক্রের দেয়া ০১৯১৩২২১৪২৬, ০১৯১৮১১২৭৭ ও ০১৭১৮৬৮৪৬৩৬ নম্বরে ওই চালক ০১৯৩৫৪৬৮০৯৭ থেকে বিকাশে টাকা দিয়ে তবেই রেহাই পান।
জরিমানা জমা দিতে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি প্রয়োজন হয়। তাৎক্ষণিকভাবে অনেকের কাছেই তা থাকে না। এই সুযোগ নেন মোশাররফ। ২শ’ থেকে ২৫০ টাকায় পরিচয়পত্রের ফটোকপি বিক্রি করে বিল জমা দেন তিনি। এই কাজটি বাইরের অন্য কেউ করতে পারেন না স্থানীয় সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের কারণে। বিআরটিএ’র এই অনিয়ম সম্পর্কে উপ-পরিচালক প্রকৌশলী এসকে মাহবুব-ই-রাব্বানী বলেন, বিআরটিএ-কে দালালমুক্ত রাখতে আমরা সচেষ্ট। এখানে কেউ অনিয়ম করলে ছাড় দেয়া হবে না। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সনদ নিয়ে এবং সনদ ছাড়া উভয় পদ্ধতিতেই চলছে যানবাহন। আবদুল কাদের নামক চালক জানান, ফিটনেস নেই বলে প্রায়ই গাড়ি আটক করে ট্রাফিক পুলিশ। টাকা দিলেই আবার ছেড়ে দেয় এভাবেই গাড়ি চালাচ্ছেন তিনি। গাবতলী-যাত্রাবাড়ী রুটের একটি বাসের চালক হাবিব জানান, গাড়ির ফিটনেস নেই অনেক আগ থেকেই। সড়কে চলাচলের বিষয়টি কোম্পানির ব্যাপার। তারাই ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করেন। সূত্রমতে, ট্রাফিক পুলিশের অসাধু কর্মকর্তাদের পরিবহন মালিকপক্ষ উৎকোচের বিনিময়ে ম্যানেজ করে। তবে অভিযান শুরু হলে এসব গাড়ির দেখা মেলে না রুটে। রাত ১০টার আগে রাজধানীতে ট্রাক প্রবেশে নিষেধ থাকলেও দিনদুপুরেই ট্রাক ঢুকতে দেখা যায়।

একইভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই বিভিন্ন সড়কে অটোরিকশা-লেগুনা চালাচ্ছেন অনেকে। যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, গুলিস্থানে কথা হয় লেগুনা চালকদের সঙ্গে। তাদের অনেকেরই লাইসেন্স নেই। রাজ্জাক নামে এক লেগুনা চালক জানান, লাইন্সেন পাওয়া কঠিন। তার চেয়ে ট্রাফিক পুলিশ ম্যানেজ করেই চলছেন তিনি। এজন্য প্রতিদিনই ২৫০ টাকা লাইন ফি দিতে হয় তাকে।

শনিবার বিকাল ৫টায় খিলক্ষেত এলাকায় এক সিএনজি অটোরিকশা আটক করেন ওই এলাকার ট্রাফিক সার্জেন্ট সুকান্ত। চালক লাল মিয়ার অভিযোগ, যত্রতত্র পার্কিংয়ের অভিযোগে তার কাছে ১ হাজার টাকা দাবি করেন সুকান্ত। টাকা দিতে রাজি না হলে রেকারের ভয় দেখান তিনি। শেষ পর্যন্ত লাল মিয়ার অটোরিকশার নামে একটি মামলা দেন সুকান্ত। অনেকক্ষেত্রেই উৎকোচ গ্রহণ করে আইন অমান্য করা চালকদের মামলা থেকে রেহাই দেন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারা।

ঢাকা মেট্রোপলিটনের ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে অভিযান চলছে। এসব গাড়ি দুর্ঘটনা ও যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীতে ট্রাক প্রবেশ সম্পর্কে তিনি জানান, রাত ১০টার আগে বাইরে থেকে রাজধানীতে ট্রাক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে। এসব ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশের কেউ অনিয়ম করলে সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পুর্বে প্রকাশিতঃ mzamin.com/details.php?mzamin=ODg3ODg=&s=Mw==

August 22, 2015

বিদেশে যাচ্ছেন, মিষ্টি খাওয়াবেন না?

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের সিভিল এভিয়েশন কর্মকর্তাদের মিষ্টি খাওয়াতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন বর্হিগমন যাত্রীরা। তবে সরাসরি মিষ্টি নয় ৫’শ কিংবা এক হাজার টাকা দিলেই মিষ্টি খাওয়ার চাহিদা পুরণ হয় সিভিল এভিয়েশন কর্মকর্তাদের। এভাবে সকল যাত্রীর কাছ থেকেই মিষ্টি খাওয়ার আবদার করে থাকেন তারা।

যাত্রীর মালামাল চেক করার সময় এভিয়েশন কর্তারা লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে যাত্রীদের কাছে মিষ্টি খাওয়ার জন্য টাকা চাইতে থাকেন। টাকা না দিতে পারলে দেশের বাহিরে যাবেন অথচ আমাদেরকে মিষ্টি খাওয়ানোর কথা মনে থাকেনা বলে মৃদু ভৎসনা করেন।

এছাড়া, কারও পকেটে বাংলাদেশী টাকা থাকলে বিদেশে বাংলাদেশী টাকা দিয়ে কি করবেন বলে টাকাগুলো কেড়ে নেন কর্মকর্তারা।


মুন্সিগঞ্জ থেকে আসা বিমানযাত্রী সেলিম পাঠান ৭ দিনের জন্য মালয়েশিয়া বেড়াতে যাবেন। ইমিগ্রেশন পার করে সিভিল এভিয়েশন কর্মকর্তার সামনে গেলে তার মানিব্যাগ চেক করে চারশ টাকা পান। বিদেশে বাংলাদেশী টাকা নেয়া নিষিদ্ধ জানিয়ে টাকাগুলো রেখে দেন তারা। কিন্তু এ টাকা কোথায় যাবে জানতে চাইলে কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।


এ প্রতিবেদক নিজেও এভিয়েশন কর্মকর্তাদের এমন আচরনের সম্মুখিন হন। মানিব্যাগে প্রায় ১৭’শ টাকা পাওয়া গেলে সে টাকা রেখে দিতে চান। নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তখন কর্মকর্তারা বলেন, ‘ভাল কথা, বিদেশে যাচ্ছেন তো আমাদেরকে মিষ্টি খাওয়াবেন না? এ প্রতিবেদক ২’শ টাকা বের করে দিতে চাইলে এক নারী কর্মকর্তা রাগত স্বরে বলেন, ‘লাগবে না আপনার টাকা, এ দিয়ে কি মিষ্টি খাওয়া যাবে? আপনি নিজেই খান।


মুন্সিগঞ্জ থেকে মালয়েশিয়া ভ্রমণের জন্য ইমিগ্রেশন পার করে এভিয়েশন কর্মকর্তার সামনে আসেন আব্দুর রশিদ নামে একজন ব্যবসায়ী। প্রবাসে থাকা আত্মীয়-স্বজনের জন্য তিনি দুই প্যাকেটে ৪ কেজি মিষ্টি হাতে করে নিয়ে আসেন। এভিয়েশন কর্তারা তার কাছেও মিষ্টি খাওয়ার টাকা চেয়ে  বলেন, মিষ্টি বিদেশে নিয়েই যাবেন, আমাদেরকে খাওয়াবেন না? তিনি প্যাকেট  খুলে মিষ্টি খেতে দিতে চান। তখন কর্মকর্তারা বলেন, আপনি টাকা দিয়ে যান আমরা পরে খেয়ে নেব।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বিমানযাত্রী বলেন, সিভিল এভিয়েশন কর্মকর্তারা মিষ্টি খাওয়ার কথা বলে এক প্রকার চাঁদাবাজি করছেন। অনেক সময় টাকা না দিলে ব্যাগ রেখে দেয়াসহ ফ্লাইট ক্যানসেল করে দেয়ার হুমকি দেন।


ইউনিভার্সিটি মালয়ার আইন গবেষক মিনহাজ উদ্দিন মিরান বলেন, প্রবাসে যাওয়ার প্রথম পদক্ষেপেই বিমান বন্দরে আমরা এমন হয়রানির শিকার হই তাহলে দেশের প্রতি টানের জায়গাটা হালকা হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় হলেও সরকার এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এতে নিজ দেশের জনগণের কাছেই ইমেজ সংকটে পড়ে সরকার। 


পুর্বে প্রকাশিতঃ mzamin.com/details.php?mzamin=ODg5NzY=